‘পল্লবীর সাহিনুদ্দিন হত্যার ভিডিও নোয়াখালীর যতন সাহার বলে অপপ্রচার’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘পল্লবীর সাহিনুদ্দিন হত্যার ভিডিও নোয়াখালীর যতন সাহার বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শিগগিরই খুঁজে বের করা হবে। তারা কেন এসব করছে তার জবাব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দিতে হবে।’

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে ‘র‌্যাবের প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন’ শীর্ষক কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

গত ১৬ মে রাজধানীর পল্লবীতে সাহিনুদ্দিন (৩৩) নামে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার ভিডিও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর হত্যার সঙ্গে জড়িত ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়ালসহ সবাইকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ওই হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও তখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। সেটিকে নোয়াখালীর যতন সাহা হত্যাকাণ্ড বলে চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘এসব কারা, কেন করছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে তাদের গ্রেফতার করবে। আইনের আওতায় নেবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার মণ্ডপে যিনি ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, যে ঘটনার কারণে এতকিছু, তাকে আমরা শিগগিরই ধরে ফেলবো। তিনি বারবার স্থান পরিবর্তন করছেন, তাই ধরা পড়ছেন না। তবে দ্রুতই তাকে গ্রেফতার করা হবে। কেন তিনি এই কাজ করলেন, আমরা তা জানবো, আপনাদেরও জানাবো।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘উপমহাদেশ তথা পৃথিবীর অনেক দেশ অনেক কিছু করে, আমরা কিছু করি না। আমাদের অসাম্প্রদায়িকতার দেশ, আজকে সেই পরিবেশ নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এবার পূজামণ্ডপে হামলা করা হয়েছে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় চাঁদপুরে হিন্দুদের উপাসনালয়ে হামলা হয়েছিল। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফায়ার করতেও বাধ্য হয়েছে। পাঁচ জন মারা গেছে। কেন এই হামলা?’

পরিতোষ নামে এক তরুণ ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিয়েছিল উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পরিতোষের স্ট্যাটাসের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়ি পুলিশ পাহারা দিয়েছে। তার বাড়িতে হামলা হয়নি, তার পাশের গ্রামে হামলা হয়েছে। আমরা হামলাকারীদের শনাক্ত করছি। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’ তিনি বলেন, ‘অপপ্রচারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে আরও সোচ্চার হতে হবে।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘২০১৪ সালে এনটিএমসি গঠন করা হয়। এর সফলতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পেতে শুরু করেছে।’

অনুষ্ঠানে র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তথ্য এক জায়গায় করবো।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রযুক্তির ব্যবহার অপরাধ দমনেও সহায়তা করবে।’

পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মঈনুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বলেন, ‘যারাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) পরিচালক জিয়াউল আহসান বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের তদন্ত সংস্থা, নিরাপত্তা সংস্থাসহ যেসব বাহিনী রয়েছে তাদের প্রযুক্তির ব্যবহার করতেই হবে, তা না হলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। অপরাধ দমনে প্রযুক্তির ব্যবহার করতেই হবে।’ তিনি বলেন, ‘অন্যান্য সংস্থাও এর সুফল পাবে বলে আমি মনে করি।’

সঞ্চালক আলী আশরাফ তুষারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ। তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের প্রযুক্তির ব্যবহার করায় এখন থেকে অপরাধ ও অপরাধীকে শনাক্তে আরও অবদান রাখবে।’

তিনি বলেন, ‘র‌্যাব সদস্যদের সবকিছু ডিজিটালাইজড করা হবে। তারা ছুটির আবেদন মোবাইলে করতে পারবেন, জ্বালানি খরচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হবে, রেশন পদ্ধতি ডিজিটাল হবে।’