পরিবেশ দূষণের জরিমানার টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যয়ের সুপারিশ

পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ীদের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার টাকা থেকে দূষণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিটি বলছে, জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে যায়। সেই টাকা পরিবেশ দূষণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যয় করলে তাদের পাশে দাঁড়ানো যায়।

বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘পরিবেশ অধিদফতর দূষণকারীদের বিরুদ্ধে সবসময় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের কাছ থেকে জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু দূষণের কারণে যারা ক্ষতির শিকার হচ্ছে তাদের জন্য কিছু করা হচ্ছে না।’

এ প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘একটি নদী যদি কোনও কারখানা দূষণ করে, তবে তার কাছ থেকে জরিমানা আমরা আদায় করছি। কিন্তু দূষিত ওই নদীর পানি ব্যবহার করে অনেকের চর্মরোগসহ নানা ব্যাধি হচ্ছে। কমিটি মনে করে, এই ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ব্যয় জরিমানার অর্থ থেকে করা গেলে ভালো হয়। তাহলে তাদের পাশে দাঁড়ানো হয়।’

মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে জানিয়ে সাবের হোসেন বলেন, ‘জরিমানার অর্থ সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে। সরকার জনগণের জন্যই কাজ করে। যে জরিমানা আদায় হচ্ছে সেটা ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের জন্য খরচ করা হলে ভালো হয়।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে পরিবেশ অধিদফতর ৩৮৫ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করেছে। পরিবেশ অধিদফতরের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৭-১৮ থেকে জানা গেছে, ওই বছরে অধিদফতর  দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে।

ট্যানারিতে ‘ছাড় নয়’

এদিকে সোমবারের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরী বন্ধ নিয়ে আবারও আলোচনা হয়। এর আগে ২৩ অগাস্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হওয়ায় সাভারের চামড়া শিল্প নগরী ‘আপাতত বন্ধ রাখার’ সুপারিশ করে।

কমিটির সুপারিশের পর পরিবেশ অধিদফতর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কাছে চিঠি দেয়। চামড়া শিল্প নগরী ‘কেন বন্ধ করা হবে না’, তা বিসিকের কাছে জানতে চায় সংসদীয় কমিটি।

কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন বলেন, ‘আমরা যে সুপারিশ করেছিলাম তা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় তৎপর। এ বিষয়ে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় তা জানিয়েছে। বিসিক বলতে চাচ্ছে, তারা এ বিষয়ে বিভিন্ন মেয়াদে কার্যক্রম গ্রহণ করবে। আমরা বলেছি, ভবিষ্যতে কী করবে সেটা পরের বিষয়। এই মুহূর্তে দূষণ হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। ক্রোমিয়াম ট্রিটমেন্টের প্লান্ট নেই। এগুলো করতে হবে। যে জরিমানা করা হয়েছে, সেগুলো আদায় করতে হবে।’

সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন হয়। যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ঘনমিটার।

অর্থাৎ দৈনিক ১৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিবেশে মিশছে। গত তিন বছরে এক কোটি ৬৪ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে গেছে। এর বাইরে ক্রোমিয়াম শোধনের ব্যবস্থাও নেই সেখানে। এসব যুক্তিকে অগাস্ট মাসে সাভারের ট্যানারি বন্ধ করার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।

গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘চামড়া শিল্প খাতের উন্নয়নে সুপারিশ তৈরি ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণের লক্ষ্যে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স’ এক বৈঠক করে বলেছে, তারা এই শিল্পের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ চায়। চামড়া শিল্প নগরী বন্ধ না করে পরিবেশসম্মত ও দূষণমুক্ত করার পক্ষে টাস্কফোর্স।

সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য পরিবেশনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, তানভীর শাকিল জয়, জাফর আলম, মো. রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এবং শাহীন চাকলাদার অংশ নেন।