সফরকালে জাপানি গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২২ অক্টোবরের ঘটনা।)

জাপানি পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশ সরকারের নানা উদ্যোগের সংবাদ পরিবেশন করা হয়। পত্রিকার খবরে বঙ্গবন্ধুকে সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তিদাতা ও বিরাট ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সংবাদ যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে, তাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি জাপানের জনগণের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মনোভাব প্রতিফলিত হয়।

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয় হয়ে উঠছিল সে সময়। আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আরও সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থনদানের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশ বিপুল শ্রদ্ধা ও প্রশংসা অর্জন করে। এই দিন বিপিআই প্রকাশিত খবরে বলা হয়, অক্টোবরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই সাড়ে সাত কোটি বাঙালির নয়া প্রজাতন্ত্র সংগ্রামী আরব ভ্রাতৃবর্গের প্রতি সমর্থন জানায়।

সমগ্র বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ কেবল আরব ভাইদের প্রতি সমর্থন জানায় তা-ই নয়, আহতদের জন্য দ্রুতই চিকিৎসক দল এবং এক লাখ পাউন্ড চা উপহার পাঠিয়েছে।

আরব টেলিভিশন, বেতার ও পত্র-পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর সফরের খবর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ফলো করা হয়। কায়রোর প্রধান দৈনিক আল আহরাম এবং অন্যান্য পত্রিকায় বিশেষ করে ইরাক, মিসর, সিরিয়া ও জর্ডানের পত্রিকাগুলোতে বাংলাদেশ থেকে সাহায্য এসে পৌঁছানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়। পত্রিকাগুলোতে আরবদের সংগ্রামে এই সাহায্য ‘কেয়ার অব বাংলাদেশ’ সংহতির প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ৩৫ জন ডাক্তার ও নার্সের চিকিৎসক দল, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠায়।

দৈনিক বাংলা, ২৩ অক্টোবর ১৯৭৩অবশেষে যুদ্ধবিরতি

এইদিন রাত ১০টা ৫০ মিনিট থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ১৭ দিনব্যাপী আরব-ইসরাইল যুদ্ধের অবসান ঘটে। যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের যৌথভাবে উত্থাপিত প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়। প্রস্তাবের বিপক্ষে কেউ ভোট দেয়নি। যুদ্ধে লিপ্ত প্রধান দুটি পক্ষ জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। অপরদিকে, ইরাক যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। সিরিয়া এখনও যুদ্ধ সম্পর্কে কোনও মতামত দেয়নি।

প্রসঙ্গত, সিরিয়া নিরাপত্তা পরিষদের ১৯৬৭ সালের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেনি।

বঙ্গবন্ধুর ব্যস্ত সময়

কর্মব্যস্ত দিন ছিল সেদিন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোত্তাকিম চৌধুরী কর্তৃক প্রদত্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এর কিছুক্ষণ আগে কয়েকটি অঞ্চলে দুই দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী টোকিওতে প্রত্যাবর্তন করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ও দলের অন্যান্য সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর দিয়ে ওয়াকায়ামা প্রদেশে পাড়ি দেন এবং প্রদেশের তীর্থভূমির প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন এবং কর্মব্যস্ত শিল্পনগরী ওসাকার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে জাপানের প্রাচীন শহর কিয়োটোতে রাতযাপন করেন বঙ্গবন্ধু।

ডেইলি অবজারভার, ২৩ অক্টোবর ১৯৭৩জাপানি সাহায্য ত্বরান্বিত হবে

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফরে বাংলাদেশের অধিক হারে জাপানি সাহায্য লাভের পথ প্রশস্ত হয়। বাংলাদেশ অধিক জাপানি সাহায্য পাবে, এ ধরনের একটা গভীর আশাবাদ সরকারি মহলে সৃষ্টি হয়। জাপান সরকার বাংলাদেশকে খুব সহজ শর্তে সাহায্য দিচ্ছে এবং মনে করা হচ্ছে, জাপান এরমধ্যেই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জাপান বাংলাদেশকে পণ্য ঋণ দিচ্ছে। উল্লেখ্য, জাপান হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম সাহায্যদানকারী দেশ এবং বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম, কিন্তু সত্তর দশকে উপমহাদেশে জাপানের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। অপরদিকে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে জাপানি সাহায্যের বৃহত্তম অংশ যেতে থাকে।