তিয়াত্তরের উদ্যোগ ‘গণঐক্যজোট’ কাঠামো পেতে শুরু করে

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৫ নভেম্বরের ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের এই দিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গণ-ঐক্যজোট দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে।’ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভাষণদানকালে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এই জোট অভ্যন্তরীণ শত্রুদের ও সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্ত প্রতিহত করবে।’ গুপ্তহত্যা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যাদের হাতে অননুমোদিত অস্ত্র রয়েছে, তারা দেশের শত্রু।’

জিল্লুর রহমান সরকারের খাদ্য সংগ্রহ অভিযান সফল করে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। একই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক সকল ফ্রন্টে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জনগণ ও দলীয় কর্মীদের পার্টির অন্যান্য সংগঠন শক্তিশালী করে তোলার আহ্বান জানান।

গণঐক্যজোট তিন মাসের মধ্যে কাঠামো পেতে শুরু করে এবং তৃণমূলেও তাদের কাজের পরিধি নিয়ে আলাপ শুরু হয়।

দৈনিক বাংলা, ৬ নভেম্বর ১৯৭৩তেল আরও কমিয়ে দিলো আরব

এদিনের সিদ্ধান্তে তেল রফতানিকারক দেশগুলো তাদের তেলের ‘অস্ত্রের’ ব্যবহার আরও জোরদার করে। এ দেশগুলো অবিলম্বে তেলের উৎপাদন ২৫ শতাংশ হ্রাস করার কথা ঘোষণা করে। এর আগে তারা তাদের উৎপাদন প্রতিমাসে পর্যায়ক্রমে ৫ শতাংশ হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

তবে মধ্যপ্রাচ্যে উভয় রণাঙ্গনে যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭৩ সালের ১৭ অক্টোবর তাদের বিভিন্ন মন্তব্যের কথা স্মরণ করলে এই দিনের নেওয়া সিদ্ধান্তের অর্থ বোঝা কঠিন নয়। ওই সময় তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের সিদ্ধান্তকে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আবেদন ও হুঁশিয়ারি বলে বর্ণনা করেছিল। যুদ্ধ স্থায়ী হবে পূর্বের এই ধারণায় তেলকে একটু ধীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিন একজন মিসরীয় মুখপাত্র এই মর্মে হুঁশিয়ারি দেন, জাতিসংঘ প্রস্তাব অনুযায়ী—২২ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি সীমারেখায় সৈন্য প্রত্যাহার করতে ইসরাইল যদি অস্বীকার করে, তাহলে মিসর হয়তো আবারও যুদ্ধ শুরু করতে পারে। এদিকে দামেস্কো থেকে এপি’র খবরে প্রকাশ, আরব ও সোভিয়েত নেতাদের আনাগোনা চলতে থাকার মধ্যে সিরিয়াও এই মর্মে হুঁশিয়ারি দিয়েছে—অধিকৃত সব ভূখণ্ড থেকে ইসরাইল সৈন্য প্রত্যাহার না করলে আবারও যুদ্ধ শুরু করা হবে।

দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ নভেম্বর ১৯৭৩মধ্যপ্রাচ্যের পথে কিসিঞ্জার

ওয়াশিংটন থেকে ইউপিআইর খবরে প্রকাশ, কিসিঞ্জার বিশ্ব সফরে বেরিয়েছেন। ওয়াশিংটন ত্যাগের প্রাক্কালে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি সম্ভাবনা সম্পর্কে আশাবাদ প্রকাশ করেন। কয়েকজন আরব রাষ্ট্রদূত ও ওয়াশিংটনের চীনা লিয়াজোঁ মিশনের প্রধান তাকে অ্যান্ড্রু বিমান ঘাঁটিতে বিদায় জানাতে এসেছিলেন। যাত্রার প্রাক্কালে কিসিঞ্জার তাদের অভিনন্দন জানান। পরের দিন সৌদি আরব যাওয়ার আগে তিনি মরক্কো ও তিউনিশিয়া সফর করবেন। আরব দেশগুলো সফর করার পর কিসিঞ্জারের ইরান-পাকিস্তান ও জাপান সফর করার কথা। আলজিয়ার্সের সরকারি সংবাদপত্র আল মুজাহিদীতে বলা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আরব দেশগুলোতে সফর শেষে তাকে শূন্য ঝুড়ি হাতে বাড়ি ফিরতে হবে।

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মিসেস গ্লোড়া এদিন দেশের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনে আলাপ-আলোচনা তার মনে এই প্রত্যয় জন্ম দিয়েছে যে কোনও কোনও বিষয়ে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র তাদের এখনও বন্ধু বলে মনে করে। ইসরাইলি কূটনীতিকরা অবশ্য বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানের জন্য কী কী পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে কথা হয়েছে।

ডেইলি অবজারভার, ৬ নভেম্বর ১৯৭৩ইয়েমেনের স্বীকৃতি

ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্র এদিন সরকারিভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ আল জুনাইদ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানিয়ে যে তারবার্তা পাঠিয়েছেন, তার প্রত্যুত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন দুই বন্ধু ভাবাপন্ন দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা  শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব আরোপ এবং আরবদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের প্রতীক বাংলাদেশের সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন।