গণপরিবহন বন্ধ, তবু কেন দিনভর যানজট?

তেলের দাম বাড়ায় গত শুক্রবার থেকে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছে মালিক-শ্রমিকরা। শনিবার ও আজ রবিবার (৭ নভেম্বর) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রাজধানীর রাস্তায় অফিসগামী ও সাধারণ যাত্রীদের বসে থাকতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তারপরও রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে সিগন্যাল সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশদের।

ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে গণপরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহন ছিল শূন্য। বিআরটিসির বাস ছাড়া চলছে না কোনও গণপরিবহন। এই পরিস্থিতিতেও মৎস্য ভবন থেকে কাওরানবাজার মোড়ে আসতে লেগেছে প্রায় ৩০ মিনিট। মোড়ে মোড়ে লেগে ছিল জ্যাম। এমন যানজটের নেপথ্যে প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়িকেই দায়ী করা হচ্ছে।

ব্যক্তিগত সব গাড়ি রাস্তায়?

যানজটের যত কারণ এ পর্যন্ত জানা যায়, সেগুলোর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির প্রসঙ্গ এলেও সেটা তত গুরুত্ব পায় না। গবেষকরা সড়কের বিশৃঙ্খলাকেই বড় করে দেখান সবসময়। ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার ৬ শতাংশ মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করলেও তারা রাস্তার ৭৬ শতাংশ দখল করে আছে। ৬-৮ শতাংশ রাস্তা গণপরিবহনের দখলে। পার্কিং ও অবৈধ দখলে রয়েছে রাস্তার বাকি অংশ।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন যোগ হয় ২৫০ গাড়ি। বছরে যা প্রায় ৯০ হাজার। এরমধ্যে ৭০ হাজারই ব্যক্তিগত গাড়ি। গণপরিবহন বন্ধের খবরে এসব গাড়ি রাস্তায় নেমেছে। আবার গাড়িগুলো সারা দিন রাস্তাতেই থেকেছে।

অন্য সময় এমনটা হয় না বলে জানান রায়হান। তিনি বলেন, আমরা একটা ট্রিপ ধরতে না ধরতেই আরেকটা কল আসে। বেশিরভাগই নিতে পারিনি। রাস্তায় জ্যামের কারণে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হলো। সব মিলিয়ে ঢাকার রাস্তার জ্যামের আরেকটি ছবি পেলাম।

 

রাস্তায় কেন গাড়ি নড়ে না?

গণপরিবহন না নামার কারণে রাস্তা ফাঁকা থাকবে ভেবেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছেন আহমেদ সোবহান। কিন্তু রাস্তায় ভিন্নচিত্র। বাস নেই। কিন্তু রাস্তাজুড়ে ব্যক্তিগত গাড়ি আর রিকশার ছড়াছড়ি। বাসের এলোমেলো চলাচলে যানজট হয় জানতেন, কিন্তু এই তিন দিনে সেটাই যে একমাত্র কারণ নয়, সেটা বুঝতে পেরেছেন উল্লেখ করে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এক ঘণ্টায় শ্যামলী শিশুমেলা থেকে কলাবাগান পৌঁছাতে পারিনি। শনিবার বেশিরভাগ অফিস বন্ধ থাকে। সেদিনও একই অবস্থা ছিল।’

মিরপুর ১০ নম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে প্রধান সড়ক দিয়ে ধানমন্ডি এসেছেন রিকশাচালক রজব আলী। হাসিমুখে বললেন, মাঝে মাঝে এমন হলে খারাপ না। এমনিতে আমাদের মেইন রোডে উঠতে দেয় না। এখন আমাদের ছাড়া উপায় নাই। বাস নেই, তবু এত ভিড় কেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বৈধ-অবৈধ দেখাদেখি নেই। সবাই এখন মেইন রোডে। জ্যাম তো হবেই।’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গণপরিবহনের মধ্যে বাস আছে প্রায় দেড় লাখ, ট্রাক আছে ৩ লাখ। বাকি সব ছোট যান। আমাদের দেশে বছরে পাঁচ লাখ মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি নামে। আমরা বড় গাড়ি বাদ দিয়ে ছোট যানকে প্রমোট করি। এ কারণে পরিবহন ধর্মঘট হলেও যানজট কমে না।