জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিপূরণ: সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি বিশ্বনেতারা

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিল সংগ্রহ করতে আলোচনা চললেও একমত হতে পারেননি বিশ্বনেতারা। এই আলোচনা মন্থর গতিতে চলছে বলেও অভিযোগ পরিবেশবাদীদের। বিষয়টি নিয়ে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে সোমবার (৮ নভেম্বর) থেকে মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা শুরু হবে।

উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশকে ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপরও চলতি বছরের মধ্যেই কীভাবে সেই প্রতিশ্রুতি আদায় করা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে বিশ্বনেতারা এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। এই আলোচনা সফল হলে ২০২২ সাল থেকে শুরু হবে অর্থছাড়।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ, বন ও জনবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংদীয় কমটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আলোচনা চলছে। আশা করছি, এবার অগ্রগতি হবে। এবারও আলোচনায় ছিল ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল নিশ্চিত করা নিয়ে। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের আলোচনাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস উঠে আসে।’

জলবায়ু সম্মেলন বিষয়ক বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিকুর রহমান বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ উন্নত দেশগুলোর চেয়ে কম; অতীতে বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণের দায়ভারও উন্নত দেশগুলোর। অথচ উন্নয়নশীল দেশগুলোকেই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে সাইক্লোন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, নদী ও পাহাড় ভেঙে পড়া অনেক বেড়ে গেছে। এখন প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড়-সাইক্লোন হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর প্রভাব থেকে বাঁচা যাবে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় আঘাত আনতে পারে। বাড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভিটেমাটি ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে হাজার হাজার মানুষ। যাদের কারণে এদের এই ক্ষতি তারা বিষয়টি নিয়ে তেমন সাড়া দিচ্ছে না। এদের পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ দরকার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য তা পাওয়া যাচ্ছে না।

আজ রবিবার কপ-২৬ সম্মেলন বন্ধ ছিল। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অর্থায়নে ধনী দেশগুলোর আগের মতো অনঢ় অবস্থানের কারণে বহুল প্রত্যাশিত এ সম্মেলনের সফলতা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। এমন অবস্থায় ২০২৫ সালের মধ্যে ধনীদেশগুলোর প্রতিশ্রুত প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন হিসেবে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা কেবল কাগুজে প্রতিশ্রুতি হিসেবে থাকবে কিনা সেই অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, শনিবার গ্লাসগোর রাস্তায় কয়েক হাজার লোক বিক্ষোভে সমবেত হয়েছে। ইতোমধ্যে পৃথিবী উষ্ণতার শিকার হয়েছে উল্লেখ করে পরিবেশবাদীরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বিক্ষোভে শতশত শিশুরাও অংশ নিয়েছে।