তিয়াত্তরের শেষে গণজোট জোরেশোরে কাজ শুরু করে

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১২ নভেম্বরের ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের নভেম্বর থেকে গণ-ঐক্যজোট ধারাবাহিকভাবে কাজ শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে গণজোটের একটি মুলতবি সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় জোটের এক সভায় দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সরকার ঘোষিত বর্তমানে খাদ্যশস্য সংগ্রহ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে ঐক্যজোটের সাংগঠনিক তৎপরতা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। সেই তৎপরতার অংশ হিসেবে সেই বছরের ২২ ও ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রামে কর্মিসভা, জনসভা এবং ২৫ ও ২৬ নভেম্বর ময়মনসিংহে জনসভা ও কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। সেদিনের সভায় উত্থাপিত সব প্রশ্ন পরের কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তাঁর সঙ্গে পরামর্শের পর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে। এদিনের (১২ নভেম্বর) সভায় উপস্থিত ছিলেন— পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মতিয়া চৌধুরী, পীর হাবিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

মন্ত্রীরা দেশের পুনর্গঠনে আহ্বান জানাচ্ছিলেন

সে সময় মন্ত্রীরা প্রতিটি অনুষ্ঠানে দেশ পুনর্গঠনে সকলকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এদিন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুর রহমান সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করে কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বিধ্বস্ত অর্থনীতি গঠনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। কোল্ড স্টোরেজ উদ্বোধনকালে আয়োজিত সভা উপলক্ষে তিনি এই আহ্বান জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিক অধিকার অর্জন করেছি। কিন্তু এখনও অর্জন করতে পারিনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। সে লক্ষ্য অর্জনে দেশের আপামর জনসাধারণকে কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।’

ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘সমাজতন্ত্র শুধু একটা  থিওরি না, এটাকে বাস্তবায়িত করতে হলে সমাজতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা বক্তৃতাকালে বলেন, দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হবে। তাদের পক্ষ থেকে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। 

.মিসর ও ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা

বিবিসির খবরে প্রকাশ, রবিবার সই করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রশ্নে মিসর ও ইসরাইলি সামরিক অফিসারদের মধ্যে এদিন কয়েক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার স্থান ছিল কায়রোর সুয়েজ ও ইসরাইলি চেকপোস্ট। এদিকে অবিলম্বে যুদ্ধবন্দি বিনিময় শুরু হবে বলে তেলআবিবে আশা প্রকাশ করা হলেও এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনও আভাস রেডক্রস সদর দফতর থেকে পাওয়া যায়নি। বিবিসি জানায়, কয়েক দিনের মধ্যে রেডক্রসের কাছে ইসরাইলের যুদ্ধবন্দিদের একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রদান করা হবে।

বন্দি নির্যাতন প্রসঙ্গেও কথা শুরু হয়। ইসরাইলের সৈন্যদের ওপরে নির্যাতন সম্পর্কে আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ রেডক্রসের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সাধারণ কমিশন প্রত্যাখ্যান করে। আরবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে আনা ইসরায়েলি প্রস্তাব সাধারণ পরিষদে ৬২.১৮ ভোটে নাকচ হয়ে যায় এবং ১৬ জন প্রতিনিধি ভোটদানে বিরত থাকেন।

.পাঁচ বছরে দেশবাসী স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে

শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে শিল্প খাতে উৎপাদনে উন্নতির মাত্রা পরিলক্ষিত হয়েছে। উৎপাদনে এই অগ্রগতির হার অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের উৎপাদন এর আগের উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।’ শিল্পমন্ত্রী নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বক্তৃতা করছিলেন। উৎপাদন মাত্রার বিস্তারিত বিবরণ প্রসঙ্গে তিনি বিশেষ করে বস্ত্রশিল্পের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৮ কোটি গজের মধ্যে প্রথম তিন মাসে প্রায় তিন কোটি গজ উৎপাদন হয়েছে। স্বাধীনতার পূর্বে সর্বোচ্চ বার্ষিক উৎপাদন ছিল ৫ কোটি ৫৩ লাখ গজ।’

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা যায়।’