ইসির উৎকণ্ঠা আওয়ামী লীগ জানে: সিইসি

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে হতাহতের ঘটনায় নির্বাচনে কমিশনের উৎকণ্ঠার বিষয়টি আওয়ামী লীগ জানে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগের) সঙ্গে আলাদা বৈঠক করিনি। কিন্তু আমরা বার্তা দিয়েছি। তারা জানে আমাদের উৎকণ্ঠা আছে। তাদের বলা হয়েছে যেন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখে।

সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়—নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মারামারি হচ্ছে। কিন্তু দায় আসে আপনাদের ওপর। এ নিয়ে আওয়ামী লীগকে কোনও বার্তা দিয়েছেন?

জবাবে কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। মন্তব্য করা যাবে না। সহিংস ঘটনা কিন্তু নির্বাচন ছাড়াও ঘটে। পুলিশ তখন ব্যবস্থা নেয়। নির্বাচনের ঘটনাতেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, দলীয় লোকজন বঞ্চিত থাকায় এ রকম হতে পারে। এ নিয়ে আমাদের নিজস্ব বিশ্লেষণ নেই। এটা আমরা করতেও পারি না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। কোনও একটি ঘটনা ঘটলে টিভিতে সেটা বারবার দেখানো হয়। এতে মানুষের ধারণা হয় সব জায়গায় বুঝি এমন ঘটছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমাদের কাছে একটি মৃত্যুও স্বাভাবিক নয়। ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। যেসব বিভাগে বেশি নির্বাচন আছে, সেখানে গিয়ে মোটিভেট করার চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।

এর আগে লিখিত বক্তব্যে নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকটি স্থানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কোনোটাই প্রত্যাশিত নয়। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসবের পেছনে ছিল আধিপত্য বিস্তার, বংশীয় প্রভাব ও ব্যক্তিগত শত্রুতা।

সিইসি আরও বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৩৩টি ইউপি নির্বাচনে আট হাজার ৪৭২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। এরমধ্যে ১৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ প্রিজাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত হওয়ায় বন্ধ করা হয়। তারপরও ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিচ্ছিন্ন হানাহানি ও প্রাণহানি ঘটেছে, যা কাম্য নয়।

সিইসি দাবি করেন, ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ প্রস্তুতি নেয়। ভোট গ্রহণের দিন ও আগে-পরে ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনি এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যসহ র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও বিজিবির মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়। এছাড়া আচরণবিধি ভঙ্গসহ নির্বাচনি অপরাধের বিচারের জন্য নির্বাচনি ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। ওইসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়।

তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় নরসিংদীর রায়পুরের একটি দুর্গম চরে হতাহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গণমাধ্যমে এসেছে, গত ১০ বছর ধরে আধিপত্য বিস্তারের নামে নরসিংদীর চরাঞ্চলগুলোতে দুই শতাধিক মানুষ মারা গেছে। নরসিংদীতে এবারের প্রথম ঘটনাটি ঘটে ৪ নভেম্বর। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে নির্বাচনের দিন ভোরে।

তিনি আরও বলেন, মাগুরার যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তা নির্বাচনি প্রতীক বরাদ্দের আগে। যা ছিল এলাকার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে। মেহেরপুরের গাংনির ঘটনার পেছনে ছিল বংশগত আধিপত্য বিস্তার। মেহেরপুরের ঘটনা ঘটেছে নির্বাচনের দিন ভোর-রাতে। তাদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে দুই ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। আরও দুই ধাপের কার্যক্রম চলছে। এরপর একাধিক ধাপে ইউপি নির্বাচন হবে। সেগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।