বঙ্গবন্ধুকে কোপার্নিকাস স্মারক উপহার

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২২ নভেম্বরের ঘটনা।)

বাংলাদেশে নিযুক্ত পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বিগনিউ বাইজোভোস্কি ১৯৭৩ সালের এদিন সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীকে ল্যান্ড অব নিকোলাম কোপার্নিকাস নামে একটি গ্রন্থ উপহার দেন। এনা’র খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীকে প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ  কোপার্নিকাসের ৫শ’ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্মারক পদক উপহার দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া গ্রন্থটিতে জ্যোতিবিজ্ঞানী কোপার্নিকাসের কর্মময় জীবন সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য রয়েছে। এই জ্যোতিবিজ্ঞানীর ৫শ’ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তারই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে গ্রন্থ ও পদক উপহার দেওয়া হয়।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৩ নভেম্বর ১৯৭৩চোরাচালান রুখতে জোরদার ব্যবস্থা হচ্ছে

এই দিন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযানকে পুরোপুরি সফল করে তোলার জন্য সীমান্তে চোরাচালান রোধ ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বিপিআই পরিবেশিত খবরে প্রকাশ— সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে খাদ্য সংগ্রহ অভিযান ত্বরান্বিত এবং সংগৃহীত খাদ্যশস্যের পরিবহন দ্রুততর করার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিডিআর, রক্ষী বাহিনী ও পুলিশ এই অভিযানে কর্তৃপক্ষকে সব রকমের সাহায্য জোগাবে। এছাড়া ভোগ্যপণ্য সরবরাহ সংস্থা খাদ্য ও রেশনিং বিভাগের কর্মচারী এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা প্রয়োজন হলে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, কৃষক ও উৎপাদনকারীরা যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যে সরকার ঘোষিত মূল্য পান, তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সারাদেশে সর্বাধিক সংখ্যক ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। খাদ্যশস্য মজুত রাখার জন্য গুদামে অতিরিক্ত স্থানের প্রয়োজন দেখা দিলে সীমান্তবর্তী এলাকায় আটক পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে দেওয়ার কথা সিদ্ধান্ত হয়।

১৯৭৩ সালের ২৩ নভেম্বর দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের শিরোনামআগামী এপ্রিলে লোক বিনিময় শেষ হবে

১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক রেডক্রসের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে যে লোক বিনিময় শুরু হয়েছে, তা ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে শেষ হবে বলে আশা করা হয়।

ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী আবদুল মোমেন বিপিআইয়ের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানান যে, প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার আটক বাঙালির মধ্যে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ৪২ হাজার পাকিস্তান থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। একই সময়ে ২২ লাখ ৬৮ হাজার পাকিস্তানির  মধ্যে ১৬ হাজার ৭৪ জন বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশে ফিরে গেছেন। প্রতিমন্ত্রী  আরও  জানান যে, জাতিসংঘের ভাড়া করা শান্তি বিমান ও একটি রুশ জাহাজ লোক বিনিময় কাজে নিয়োজিত রয়েছে। পূর্ব জার্মানির একটি বিমানও শুক্রবার চট্টগ্রাম থেকে আটকে পড়া অবাঙালিদের পাকিস্তানে যাওয়া শুরু করবে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু হাইকমিশনার প্রিন্স আগা খান বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে সম্প্রতি আলোচনাকালে আভাস দিয়েছেন যে, আগামী মাসের প্রথম দিকে লোক বিনিময় ত্বরান্বিত হবে।

ডেইলি অবজারভার, ২৩ নভেম্বর ১৯৭৩আরও ২৫৭ জন আটক বাঙালি ফিরেছেন

বাঙালি ও পাকিস্তানের মাঝে লোক বিনিময়ের চতুর্থ দিনে জাতিসংঘের ভাড়া করা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মোট ২৫৭ জন বাঙালি দেশে ফিরেছেন। প্রথম ফ্লাইটে ১২৫ জন ছিলেন, যারা সবাই সামরিক বাহিনীর জুনিয়র কমান্ডিং অফিসার ও তাদের পরিবার। এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন,  ‘বাংলাদেশ পাকিস্তানের স্বীকৃতির কাঙ্গাল না।’ নিউইয়র্কে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো যে বক্তব্য পেশ করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সাংবাদিকদের কাছে আরও বলেন যে, ‘বাংলাদেশ ভুট্টোর স্বীকৃতির তোয়াক্কা করে না।’