কৃষিভিত্তিক নয়া অর্থনীতি গড়তে বঙ্গবন্ধুর আহ্বান

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৬ নভেম্বরের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উৎসাহবর্ধক মূল্যের নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার কাজে সার্বিক প্রচেষ্টা চালানোর জন্য জাতীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৯৭৩ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযানকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে এই বিরাট দায়িত্বকে সফল করার জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান করেন। ইউনিয়ন কাউন্সিল ও পৌরসভা নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য তিনি জাতীয় সংসদ সদস্যদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে বছর এই দিনে সকালে উত্তরা গণভবনে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার জাতীয় সংসদ সদস্য এবং ওই এলাকার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন।

নয়া অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় তৎপর হওয়ার জন্য বলার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, ‘শান্তিকামী জনসাধারণের শান্তি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতকারীদের অবশ্যই নির্মূল করা হবে।’ সম্মেলনে চোরাকারবারিদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বঙ্গবন্ধু চোরাচালান সম্পূর্ণ বন্ধ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আসন্ন নির্বাচনের বিষয় উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আওয়ামী লীগ কর্মীদের আহ্বান জানান।

দৈনিক বাংলা, ২৭ নভেম্বর ১৯৭৩উত্তরাঞ্চলে উন্নয়নের শুভ সূচনা হলো

১৯৭৩ সালে উত্তরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিন দিন অবস্থানকালে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সমস্যা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু জনসাধারণকে আশ্বাস দিয়ে বলেন যে ‘উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোর দ্রুত উন্নয়ন ঘটানো হবে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, স্থানীয় সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় বঙ্গবন্ধু বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোর সাধারণ মানুষের কল্যাণে অক্লান্তভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সময় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক শিল্পের উন্নয়ন এবং মৎস্য, ফল ও শাকসবজির চাষাবাদ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী উৎপাদনকারীদের সরকার নির্ধারিত উৎসাহজনক মূল্যপ্রাপ্তি সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।

দিল্লি আলোচনা এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তা সুদৃঢ় করবে

সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান লিওনাদ ব্রেজনেভ অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন,  ‘এশিয়া মহাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ তিনি বলেন, ‘ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার নিবিড় বন্ধুত্বকে আরও নিবিড় করে তোলা এবং দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও ব্যাপক করে তোলার জন্য তিনি ভারত সফরে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার যেসব আলোচনা হবে, তা এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ভালো হবে।’ বিমানবন্দরে এক সংবর্ধনায় দেওয়া ভাষণের উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি। ২৬ নভেম্বরে দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে তাকে নিয়ে একটি বিমান এসে পৌঁছায়। সঙ্গে সঙ্গে বহু শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী রাজধানী দিল্লি আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে। বিমানবন্দরে সংবর্ধনা জানাতে আসা হাজার হাজার নর-নারীর কণ্ঠে স্লোগান ধ্বনিত- প্রতিধ্বনিত হয়ে ওঠে ভারত-সোভিয়েত দীর্ঘজীবী হোক।

ডেইলি অবজারভার, ২৭ নভেম্বর ১৯৭৩

ঘোষিত হতে যাচ্ছে প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনা

দেশের প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনা ২৬ নভেম্বর ১৯৭৩ ঘোষণা করা হয়। এ উপলক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান সচিবালয়ে কমিশনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে মিলিত হওয়ার কথা। এদিকে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের দিকে জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হতে পারে বলে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। রাষ্ট্রপতি উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দান করবেন।