তিয়াত্তরে আবারও ঘূর্ণিঝড়, ত্রাণ তৎপরতা জোরদারে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৯ ডিসেম্বরের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংশ্লিষ্ট সব সরকারি কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবী, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত উপকূলবর্তী দ্বীপগুলোতে দুর্গত জনগণের ত্রাণ-সাহায্য তৎপরতায় যোগদান করতে নির্দেশ দেন। দুর্গত এলাকায় সাহায্য সামগ্রী, ওষুধপত্র, শিশুখাদ্য অবিলম্বে পৌঁছানোর তিনি নির্দেশ দেন। খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশাল ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে এদিন প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসও ছিল। বাসস জানায়, এদিন ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকার ন্যূনতম ১৩ ব্যক্তি মারা যান। বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী দুর্গতদের সাহায্যের জন্য হারিকেন, লণ্ঠন ও টর্চলাইট সরবরাহের নির্দেশ দেন। রাতের বেলা ও সাহায্যদানে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার জন্য বঙ্গবন্ধু হারিকেন, লণ্ঠন ও টর্চলাইট সরবরাহের নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য গাজী গোলাম মোস্তফা উপকূলবর্তী অঞ্চলের জনগণকে উদ্ধারের ব্যাপারে সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার ঘোষণা দেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ ডিসেম্বর ১৯৭৩

ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রতি নির্দেশ

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল হক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান সংগঠনের খুলনা, যশোর, বরিশাল ও নোয়াখালীর সব কর্মীকে দুর্গত এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণকে সাহায্য করার নির্দেশ দেন। এক বিবৃতিতে ছাত্রলীগ নেতারা জনগণকে উদ্ধার ও রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগের প্রশংসা করেন। ছাত্রলীগ কর্মীদের ত্রাণকার্য তদারকির জন্য এই দুই ছাত্রনেতা ঘটনাস্থলে  যাবেন বলে জানানো হয়।

ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের প্রতিমন্ত্রী আবদুল মমিন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের কর্মচারীদের নিয়ে খুলনা ও মোংলার উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানানো হয়।

শান্তি সম্মেলনে মিসরের যোগদান

শর্ত সাপেক্ষে সিরিয়া, জর্ডান এবং একইসঙ্গে  ইসরাইল যদি অংশগ্রহণ করে, তবে জেনেভায় মধ্যপ্রাচ্য শান্তি সম্মেলনে মিসর যোগদান করবে বলে উল্লেখ করা হয়। শান্তি সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানের জন্য মিসর দাবি জানিয়েছে। মিসরের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে—নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাসসহ নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো ও পরবর্তী পর্যায়ে প্যালেস্টাইন মুক্তি সম্মেলনে যোগদান। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসমাইল ফাহমি ২৪ ঘণ্টায় কায়রোতে মার্কিন ও সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।

ডেইলি অবজারভার, ১০ ডিসেম্বর ১৯৭৩বাংলাদেশে জাতিসংঘের ত্রাণ তৎপরতা

জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল কুর্ট ওয়ার্ল্ড হেইম এদিন জানান, স্বাধীনতা লাভের পর গত দুই বছরে বাংলাদেশকে মোট ১৩২ কোটি ৪০ লাখ ডলার সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। এই সাহায্যের মধ্যে ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার বহুপক্ষীয় এবং ৮৭ কোটি ডলার দ্বিপক্ষীয় সাহায্য প্রদান করা হয়েছে।

সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘এটা হচ্ছে জাতিসংঘের উদ্যোগে পরিচালিত সব ত্রাণ তৎপরতার মধ্যে বৃহত্তম।’ রিপোর্টে তিনি বলেন, বাংলাদেশের লোকদের খাদ্যদান ও যানবাহনের সব সুবিধা প্রদান করার জন্য বাংলাদেশে জাতিসংঘ সংস্থা আনরড-এর সঙ্গে ভালোভাবে আলোচনা করে ত্রাণকার্য সুনিশ্চিত করা হয়েছে। আনরড পহেলা এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে ত্রাণকাজের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করবে। ওয়ার্ল্ড হেইম গত দুই বছরে বাংলাদেশে ভালো শস্য উৎপাদন হয়েছে বলে বিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করেন।