ডাকটিকিটে বিজয় দিবস

নানা মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথাকে ধরে রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি মাধ্যম স্মারক ডাকটিকিট। বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবস থেকেই এটি প্রকাশিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন, আকার, রঙে ডাকটিকিটে বিজয় দিবস, মুক্তিযুদ্ধকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আসা হয়েছে বিজয় দিবসের স্মারক ডাকটিকিটে। লাল-সবুজ পতাকা, মুক্তিযোদ্ধা, সাত বীরশ্রেষ্ঠ, মুক্তিকামী মানুষ হয়েছেন স্মারক ডাকটিকিটের বিষয়। 

বিজয় দিবসের স্মারক ডাকটিকিটের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বরাবরের মতো এবারও বিজয় দিবসে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হবে। এ দিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। এর আগে তিনি ডাকটিকিটের অনুমোদন দেন। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবারের ডাকটিকিট বিশেষ ধরনের হচ্ছে।

মন্ত্রী জানান, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ৫০টি ডাকটিকিটের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করা হবে। এ মাসের মধ্যেই অ্যালবামটি প্রকাশ করা হবে। সব প্রস্তুতি শেষ। গত বছরের অ্যালবামের (১০০ ডাকটিকিট) মতো এটিও তুমুল জনপ্রিয়তা পাবে বলে তিনি মনে করেন।   

জানা গেছে, বিজয় দিবসের প্রথম স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় প্রথম বিজয় দিবসে। যুক্তরাজ্য থেকে ছাপিয়ে আনা হয় সেই ডাকটিকিট। আর ২০১১ সালের পর থেকে নিয়মিত বিজয় দিবসের স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবসে (১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২) ডাক বিভাগ তিনটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। এগুলোর মূল্যমান ছিল ২০ পয়সা, ৬০ পয়সা ও ৭৫ পয়সা। মুক্ত আকাশে উড়ছে ছয়টি মুক্ত পায়রা; এমন থিম ছিল ডাকটিকিটের।

১৯৮২ সালের বিজয় দিবসে ৭ বীরশ্রেষ্ঠের স্মরণে ৭টি ডাকটিকিট ও উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করে ডাক বিভাগ। ডাকটিকিটগুলো পাশাপাশি সাজিয়ে একটি সেটও তৈরি করা যায়। প্রতিটি ডাকটিকিটের দাম ছিল ৫০ পয়সা। 

বিজয় দিবসের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৯৬ সালে ডাক বিভাগ প্রকাশ করে দুটি স্মারক ডাকটিকিট। যার দাম ছিল ৪ ও ৬ টাকা। ৪ টাকা মূল্যমানের ডাকটিকিটে শোভা পাচ্ছে অপরাজেয় বাংলা, সমানে অস্ত্র হাতে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা, আর অন্যটিতে শোভা পাচ্ছে জনগণের বিজয় মিছিল।

বিজয় দিবসের ৩০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ২০০১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশ করে ৪টি স্মারক ডাকটিকিট। প্রতিটির দাম ১০ টাকা। রঙিন এই ডাকটিকিটে শোভা পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৩০ বছর লেখা।

বীরশ্রেষ্ঠদের স্মরণে ডাকটিকিটবিজয়ের ৪০ বছর পূর্তিতে ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় স্মারক ডাকটিকিট। এর মূল্যমান ১০ টাকা। ডাকটিকিটে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ইত্যাদির ছবি রয়েছে।

ডাক বিভাগ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩ সালের বিজয় দিবসে প্রকাশিত হয় স্মারক ডাকটিকিট। মূল্যমান ছিল ১০ টাকা। এতে বঙ্গবন্ধুর ছবির পেছনে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি রয়েছে। ২০১৪ সালের বিজয় দিবসের স্মারক ডাকটিকিটে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সেই বিখ্যাত ছবি, তর্জনী উঁচিয়ে ভাষণদানরত বঙ্গবন্ধু। ২০১৬ সালের বিজয় দিবসের স্মারক ডাকটিকিটে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ার ছবি। ডাকটিকিটের মূল্যমান ১৬ টাকা। ২০১৭ সালে প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিটে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সাদাকালো ছবি। অপরদিকে ২০১৮ সালে প্রকাশিত বিজয় দিবসের ডাকটিকিটে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ছবি।

২০১৯ সালের বিজয় দিবসেও একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়, দাম ১০ টাকা। এই স্মারক ডাকটিকিটে আছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের পতাকা এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের ওপরে ৫টি উড়ন্ত পায়রা।

5

২০২০ সালের বিজয় দিবসেও স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। এই টিকিটের মূল্যমান ১০ টাকা। অনেকটা জাতীয় পতাকার আদলে এই ডাকটিকিটটি তৈরি করা। এতে আছে মুক্তিকামী মানুষের ছবি। ডাক টিকিটের গায়ে লেখা ৫০তম বিজয় দিবস-১৬ ডিসেম্বর, ২০২০।

এ বছরও বিজয়ের দিনে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করা হবে। ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে বিজয় দিবস ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ দিবসের স্মারক ডাক টিকিট অবমুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে ৭১টি ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয় ২০১৭ সালে। এ জন্য ১৮টি মিনি স্যুভেনির শিট প্রকাশ করা হয়, যা প্রতিটিতে ছিল চারটি করে স্মারক ডাকটিকিট। একটিতে ছিল তিনটি ডাকটিকিট। প্রতিটি ডাকটিকিটের দাম ১০ টাকা।