সৈকতে নারীর জন্য দেড়শ’ গজের সুরক্ষা!

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নারী পর্যটকদের জন্য ‘বিশেষ এলাকা’ চালু হয়েছে। বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় এই এলাকা উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।

নারী পর্যটকদের জন্য ‘বিশেষ এলাকা’ চালু করে ১০০ থেকে ১৫০ গজ সংরক্ষিত এলাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসন বলছে, কক্সবাজার পর্যটন এলাকাকে নারীবান্ধব করতে সৈকতে নারীদের জন্য ‘বিশেষ এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে।

এমন সংবাদ প্রচারের পরই সমালোচনার ঝড় ওঠে। নারীনেত্রীরা বলছেন, নারীর জন্য সব জায়গা নিরাপদ করতে হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল বলেন, ‘নারী-পুরুষের সমমর্যাদার ভিত্তিতে সম্মিলিত যে সমাজ গড়তে আমরা আন্দোলন করে আসছি, যেটা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল—এ ধরনের সিদ্ধান্ত সেই চেতনার পরিপন্থী। সুরক্ষা দেওয়ার নামে চেতনার মূলে কুঠারাঘাত করা হলো।’

ডিবিসি টেলিভিশনের সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, ‘প্রথম যখন খবরটা দেখি তখন মনে হয়েছিল ভুয়া খবর। এখন দেখি সত্য! নারীদের জন্য প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্যও যে পৃথক জায়গা করে দিতে হবে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যে অবগাহন করতে হলে যে নারীদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা থাকবে তা বিশ্বাসই করিনি।’

তিনি আরও বলেন, “সরকারিভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে আমরা স্বীকার করে নিলাম, সৈকতে নারীদের নিরাপত্তা দিতে আমরা ব্যর্থ। একজন নারী একা একা সৈকতে যাবেন, সমুদ্রে গোসল করবেন, তার নিরাপত্তার দায়িত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের। যেহেতু প্রশাসন সেই নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তাই নারীকে ‘বাক্সবন্দি’ করে নিরাপত্তার কথা বলছে। ওই নারী যদি একা একা বাসে চড়ে যেতে পারেন, একা হোটেল মোটেলে থাকতে পারেন, তবে একা সৈকতেও যেতে পারবেন। এখন নারীর নিরাপত্তা নিয়ে যে সংকটের কথা ভাবা হচ্ছে সেটা শুধু সৈকতে নয়, দেশজুড়ে। আমার কাছে বিষয়টি উদ্ভট চিন্তার প্রকাশ মনে হয়েছে।”

বিশেষ এরিয়ার ব্যবস্থা না করে পাবলিক প্লেস ও পর্যটনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলেন, ‘নারীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এক নয়। নারীর পোশাক পরিবর্তনসহ তার পর্যটন উপভোগের ব্যবস্থাও থাকতে হবে।’

সংরক্ষিত স্থানের বাইরে কোনোভাবে নারী ভিকটিম হলে কেন তিনি সংরক্ষিত এলাকার বাইরে ছিলেন, এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে কিনা প্রশ্নে জোবাইদা নাসরিন বলেন, ‘নারীকে খাঁচায় বন্দি করে সেটার মধ্যে নারীর নিরাপত্তা দেওয়ার চিন্তাটাইতো অদ্ভুত।’