শামসুল হুদা ও বদিউল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সিইসির

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। তিনি অভিযোগ করেন, বদিউল আলমকে ড. হুদা অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচনি কাজ দিয়েছিলেন। আর ওই কাজে লাখ লাখ টাকা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সঙ্গে বৈঠকে কে এম নূরুল হুদা তার দায়িত্বের পাঁচ বছর মেয়াদে নানা কর্মযজ্ঞের কথা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি ড. শামসুল হুদা কমিশন এবং বদিউল আলম মজুমদারের করা নানা সমালোচনার কড়া জবাব দেন।

কে এম নূরুল হুদা বলেন, শামসুল হুদা সাহেব সেদিন কিছু ছবক দিলেন। তিনি বললেন, নির্বাচন কমিশনের অনেক কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু করেনি। নানা কাজ করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এক সময়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তার এ কথাগুলো মোটের আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। নির্বাচন কমিশন ইজ ওয়ান অফ দ্য মোস্ট কমপ্লিকেটেড ইনস্টিটিউট অ্যানি হোয়ার ইন দি ওয়ার্ল্ড। সেখানে একটা লোক সবকিছু করে একেবারে বাহবা নিয়ে যাবে, এটা সম্ভব না। তার জন্যও সম্ভব না। এখন তিনি নিজে তার অহমিকাবোধ থেকে অথবা তিনি আমিত্ববোধ থেকে অনেক কিছু করতে পারেন। কিন্তু সেটা সম্ভব না।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করা সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরে। তিনি নির্বাচন করেছিলেন ৬৯০ দিন পরে। এই সাংবিধানিক ব্যত্যয় ঘটানোর অধিকার তাকে কে দিয়েছিল। দিয়েছিল, ওই যে তখন একটা সরকার ছিল, কোনও গণতন্ত্র ছিল না, গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না, ছিল একটা ইমার্জেন্সি সরকার। সেটার কারণে সেটা করেছেন। সেই পরিবেশ, পরিস্থিতি তো সারাজীবন গণতান্ত্রিক সরকারের সময় সম্ভব না। আমাদের ঠিকঠিক নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এবং আমরা তা করেছি। তখন কি কোনও রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল। বিরাজনৈতিক একটি পরিবেশের মধ্যে তিনি নির্বাচন করেছেন।

তিনি বদিউল আলম মজুমদারকে নিয়োগ দিয়েছেন কিসের ভিত্তিতে? সেখানে কী কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, কোনও যোগ্যতার ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছিল? তাহলে লাখ লাখ টাকা তাকে কিভাবে দিলেন! লাখ লাখ টাকার অভিযোগ আছে, সেটা আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই লোক যেন এখানে না আসতে পারে। এর বিরুদ্ধে আর্থিক অনেক অনিয়ম আছে। এরকম অনেক কিছু বলা যায়। সুতরাং ভেবে-চিন্তে কথা বলা উচিত, যেখানে কাজ করে গেছেন, একেবারে আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে, মডেল ব্যক্তি হিসেবে চলে গেছেন, ইট ক্যান নট বি, ইট ক্যান নট বি। এটা সমালোচনার জায়গা। এখানে ১২ কোটি ভোটার নিয়ে কাজ করতে হয়। সুতরাং এটা করা যায় না। বহু সমালোচনা আছে, অনেক সমালোচনা আছে।

বদিউল আলম মজুমদারের উদ্দেশ করে কে এম নূরুল হুদা বলেন, আমি যখন কুমিল্লার ডিসি ছিলাম, তখন থেকে তার সঙ্গে পরিচয়। সেই সুবাদে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দেখা করতে চাইলেন। বললাম, আমি তো এখন ব্যস্ত। এরপর টেলিফোনে, বাসায়, এখানে-ওখানে সার্বক্ষণিক বলেন, আপনার সঙ্গে দেখা করবো। একদিন একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে দেখা করলাম। তিনি হাফিজ সাহেব, আলিম সাহেবসহ ১০-১৫ জন লোক নিয়ে আসলেন। একটা বড় বই দেখিয়ে বললেন, এই কাজটা আমরা করেছি। বললেন, প্রার্থীদের হলফনামা সংগ্রহ করে আমরা ছাপিয়েছি। বারবার বলেন, আমি শামসুল হুদা কমিশনের সময় কাজ করেছি। উনারা যাবার পর কর্মকর্তারা জানালেন, উনার বিরুদ্ধে প্রায় ১ কোটি টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে। কাজ না করেই টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে। তারপরে কমিশন সভায় তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে। এরপর আমি সাবধান হয়ে গেলাম। এরপর তিনি ছাড়েন না, বারবার টেলিফোন করেন, সাক্ষাৎ করতে চান। বারবার বলেন, ড. শামসুল হুদা কমিশনের সময় প্রচুর কাজ করেছি।

... এরমধ্যে গেলাম শ্রীলংকায়, কলম্বোয়। সেখানে তারাও গেছেন। ওখানেও বারবার একই কথা বলেছেন। আমি বললাম এই কাজ (হলফনামা বই আকারে প্রকাশ) করা কী দরকার? এটা তো কোনও কাজ হইল না। কতগুলা কাগজ এখানে (কমিশনে) থাকে, আপনারা ছাপিয়ে দিলেন। এটা তো ওয়েবসাইটে আছে। এটা নিয়ে বই করার তো কিছু দেখতেছি না। আমি তো মনে করি ঝালমুড়ির ঠোঙা বানানো ছাড়া এটার কোনও কাজ নাই।

তারপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম—কী ক্যাপাসিটিতে, কিভাবে কাজ পেয়েছিলেন, কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল? তিনি বললেন, না। আমরা তো এমনিই কাজ পেয়েছিলাম। সে সময় আমি তাকে বললাম, আপনি তো নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি নন। সংবিধান বিশেষজ্ঞ নন, তাহলে কোন যোগ্যতায় নেবো আপনাকে। একটা বই তৈরি করবেন এজন্য তো আপনাকে নেওয়ার প্রয়োজন নাই। আমি তো মনে করি না নির্বাচন কমিশনের কোনও প্রয়োজন আছে আপনার সার্ভিস নেওয়া। এভাবে দু'বছর তিনি আমার পেছনে ঘুরঘুর করেছেন।