‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মুক্তিযুদ্ধের তীর্থ ভূমি’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মুক্তিযুদ্ধের তীর্থ ভূমিতে পরিণত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক  সমাবেশে উপস্থিত থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, 'এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্তিযুদ্ধের তীর্থ ভূমিতে পরিণত হবে। এটি এমনভাবে গড়ে তোলা হবে যাতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম, সাধারণ মানুষ এমনকি পর্যটকরা আসলেও আমাদের ২৩ বছরের মুক্তি সংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারে। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আমাদের প্রথম রাজধানী মুজিবনগরকে গড়ে তোলার জন্য দুটি মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে, যার কাজ চলমান।

এসময় তিনি আরও বলেন, 'বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তারা জাতীয় সংসদ দখল করে নিয়েছিলো। এ সংসদেরই কিছু ভাড়াটিয়া জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে  তারা বলেছিলো আমরা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছিলাম। এর চেয়ে কলঙ্কজনক আর কিছু হতে পারে না। সে যুদ্ধ করেছিলো ঠিক কিন্তু ভূমিকা কী ছিলো সেটি মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। আমাদের রণাঙ্গনের অনেক সাথীরা এখনো ভুল পথে আছে। আমাদের আহ্বান থাকবে যে চেতনায় ও যার আহবানে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম আমরা যেন সে চেতনায় ফিরে আসি।

২৬ মার্চের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ ও ডিজিটাল আইডি কার্ড দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, 'আমরা কিছু পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করিনি। কিন্তু রাষ্ট্রের যেহেতু সক্ষমতা আছে সেক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত থাকতে পারে না। তারা যেন তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা পায় সেজন্য আমরা চেষ্টা করব ২৬ মার্চের মধ্যে তাদের সনদ ও ডিজিটাল আইডি কার্ড দিয়ে দেয়ার জন্য। ইতোমধ্যে সমন্বিত তালিকা হয়ে গেছে। চলতি মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে  ৪ হাজার ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে।মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন হতে আইনগত বা অন্যান্য কোনো বাধা নেই। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা থাকবে যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়ার। কারণ নির্বাচন ছাড়া কোনো কিছুই সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাহজাহান খান এমপি বলেন, 'আমাদের গর্ব আমরা মুক্তিযোদ্ধা, আমাদের জন্ম সার্থক আমরা মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের জীবন ধন্য আমরা মুক্তিযোদ্ধা। এই মুক্তিযুদ্ধের অর্জন থাকবে কিন্তু আর কোনো দিন কেউ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জন্ম গ্রহণ করবে না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবাইকে ধারণ করতে হবে। আমরা নিজেদের সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করাতে পারিনি। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করাতে পারি তাহলে জাতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করবে।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। আমাদের সশস্ত্র যুদ্ধ শেষ হয়েছে কিন্তু চেতনার যুদ্ধ শেষ হয়নি। আমাদের নতুন প্রজন্মকে যখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা ধারণ করাতে পারলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারব। সেজন্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের  চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম রেজার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ডের মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল, মুক্তিযোদ্ধা বেনজির আহমেদ এমপি, ইসমত কাদির গামাসহ আরও অনেকে।

এর আগে, সকাল সোয়া ১০টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধন ঘোষণা করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য  বীরবিক্রম মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এসময় সংগঠনটির নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।