চ্যাম্পিয়ন থেকে ১৩তম, দুর্নীতি কি কমেছে?

টিআই২০০৯ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে এসে প্রকাশিত গত বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। আপাতদৃষ্টিতে দুর্নীতি কমেছে বলে মনে হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন দুর্নীতির অবস্থান অপরিবর্তিতই রয়েছে।
উল্লেখ্য টিআই’র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল টানা পাঁচ বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল । এর মধ্যে ২০০১ সাল ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বছর। অপর দিকে ২০০২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ছিল বিএনপির শাষণামল। ২০০৬ সাল থেকে এই সূচক বাড়তে শুরু করে।
বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির ধারণা সূচক বা সিপিআই-২০১৫ (করাপশন পারসেপশনস ইনডেক্স) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে আছে সোমালিয়া। সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক।
টিআই’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ ছিল ১৪তম অবস্থানে। ২০১৩ সালে ছিল ১৬তম এবং ২০১২ সালে ছিল ১৩তম স্থানে।
অপরদিকে রাজউকের দুর্নীতি নিয়ে আয়োজিত গণশুনানির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার মো. সাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে আমরা বড় বড় গবেষণা করি, সেমিনার করি। কিন্তু সমাধান পাই না। এ কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখতে দুদক থেকে প্রাতিষ্ঠানিক টিম পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এসব টিম থেকে কোনও আউটপুট পাইনি। একসময় এসব টিমও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে।’
টিআই’র প্রতিবেদন নিয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুর্নীতি যে বেড়েছে এটা জানতে টিআই’র প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। এটা চারদিকেই দেখতে পাচ্ছি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, উচ্চক্রম অনুযায়ী ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ছয়ধাপ অগ্রগতি কিছুটা সন্তোষজনক মনে হতে পারে। অবশ্য সাতটি দেশ এবার জরিপের আওতাভুক্ত হয়নি।

দুর্নীতিতে বাংলাদেশে এ অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুর্নীতি বেড়েছে কিনা আমি বলবো না, তবে বাংলাদেশের অবস্থান গতবারের চেয়ে এক ধাপ কমেছে। তবে এই জরিপে আরও ভালো স্কোর পেতে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছার বাস্তব প্রয়োগ। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারসহ  বিভিন্ন দলিলে এমনকি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান ঘোষণার কথা রয়েছে। শুধু প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে। যারা দুর্নীতি করেন তারা যেন বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে না থাকেন তা নিশ্চিত করতে হবে। দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যে দুর্নীতি করে কেউ পার পায় না।’

টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবছরের মতো এবারও ১০০’তে ২৫ মার্ক পেয়েছে। কিছু দেশে জরিপ হয়নি বলে বাংলাদেশ একটু এগিয়ে যেতে পেরেছে। তবে এটুকু স্বস্তি যে, বাংলাদেশ নিচে নেমে যায়নি।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া এ অঞ্চলের সবগুলো দেশই বাংলাদেশের তুলনায় কম দুর্নীতিগ্রস্ত।

 

/এফএ/