রডের দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকারের অভিযান চায় সংসদীয় কমিটি

হঠাৎ করে রডের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযান পরিচালনার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করছে কিনা তা খুঁজে দেখার কথাও বলেছে কমিটি।

বুধবার (২৩ মার্চ) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে রডের দাম বৃদ্ধি এবং সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, “হঠাৎ করে রডের দাম বেড়ে গেল কেন? এতে করে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমিটি ভোক্তা অধিকার অধিদফতরকে অভিযান পরিচালনা করার জন্য বলেছে। এখানে কোনও সিন্ডিকেট কাজ করছে কিনা সেটা খুঁজে দেখতে সুপারিশ করা হয়েছে।”

জানা গেছে, চলতি মার্চ মাসের শুরু থেকে প্রতি টন রডের দাম বেড়ে ৮২ থেকে ৮৮ হাজার হয়। যা গত মাসেও ছিল ৭৭ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে। উৎপাদনকারীরা এজন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কাঁচামালের সরবরাহ সংকটকে দায়ী করছেন। তবে খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা বলছেন, ওই যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই দাম বাড়ানো হচ্ছে।

গত বছরের নভেম্বরে দেশের বাজারে রডের টন সর্বোচ্চ ৮১ হাজার টাকায় উঠেছিল, যা তখন ইতিহাসের রেকর্ড দাম ছিল।

ব্যবসায়ীরা লজ্জাজনক কাজ করেছে

আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

কমিটির সভাপতি তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, ব্যবসায়ীরা অন্যায়ভাবে তেলের দাম বাড়িয়ে লজ্জাজনক কাজ করেছে। পুরো দেশবাসীকে লজ্জায় ফেলেছে। দেশবাসী এই লজ্জা থেকে পরিত্রাণ চায়। সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে তেলের দাম কমিয়েছে। ভোক্তা অধিকার অভিযান চালিয়েছে। টিসিবি মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দিয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বোতলজাত প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ১৬৮ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৭৯৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। আর খোলা তেলের মূল্য নির্ধারণ করেছিল প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা।

তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার দোহাই দিয়ে মার্চের শুরু থেকে আরও দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে সরবরাহ সংকটও তৈরি করা হয়। আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিল গেইট থেকে তেল সরবরাহ না দেওয়ার অভিযোগ করে। তখন সরকার নির্ধারিত আগের দামের চেয়ে লিটারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

দাম বেড়ে যাওয়ায় ও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় খোলা সয়াবিন তেল অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছিল না বলে খবর আসে। অনেক বাজারে তেলের বোতল খুলে খুচরায় খোলা আকারে প্রতি লিটার ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি করা হয়।

এরপর সরকারের দিক থেকে দাম নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বাড়ে। বাজারে অভিযানসহ তেল মজুতের জন্য জরিমানা করা হয় ব্যবসায়ীদের। সয়াবিন তেল সরবরাহ ও বিপণনের সব স্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরবরাহ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন তেল পরিশোধনকারী কারখানাতেও সরেজমিনে যান ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা।

এসব উদ্যোগে সরবরাহ সংকট কমে সব বাজারে আবার তেল মিলতে শুরু করে; দামও কিছুটা কমে। তবে তা আগের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি।

দেশের বাজার পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে অতিরিক্ত দাম কমাতে সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে ১০ শতাংশ ভ্যাট তুলে ৫ শতাংশে নামায় এবং বিপণন ও পরিশোধন পর্যায় থেকে ভ্যাট তুলে নেয়।

গত ২০ মার্চ এক লিটারের পেট বোতলের নতুন দাম ১৬০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর খোলা তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১৩৬ টাকা লিটার।

সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জানিয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, “দুর্বল টিসিবি দিয়ে বড় কাজ করা যায় না। তাদের আরও বাজেটের প্রয়োজন। প্রতি বিভাগে গুদাম প্রয়োজন। আমরা এই কাজের জন্য টাকা বরাদ্দের সুপারিশ করেছি। আমরা আরও বলেছি, টেন্ডারের মাধ্যমে পণ্য না কিনে সরকারি আমদানিকারকদের কাছ থেকে যাতে টিসিবি মাল কেনে, না হলে টেন্ডারে একটা সিন্ডিকেট হয়।