২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট

সম্ভাব্য ব্যয়সীমা নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়গুলো

সরকার আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাজেট তৈরির কাজ শুরু করেছে অনেক আগেই। ইতোমধ্যেই দারিদ্র বিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ব্যয়ের আকার তৈরি করে প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে থাকবে পরিচালনা ও উন্নয়ন ব্যয়। তবে করোনা মহামারি ও বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে এবারের বাজেট তৈরির বিষয়টি বিবেচনায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নতুন বছরের জন্য রাজস্ব আহরণের প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যমেয়াদী কী পরিমাণ সম্পদ পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে আগাম ধারণা দিতে বলা হয়েছে। এই সম্পদের ওপর ভিত্তি করে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়, বিভাগ বাজেট কাঠামো প্রস্তুত করবে। ব্যয় প্রণয়নের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। কারণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সহায়তা কমলে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বৈদেশিক সহায়তা বাড়লে ওই মন্ত্রণালয়ের ব্যয় কমবে। এমন নির্দেশনা বিবেচনায় রেখে সরকারের নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের জন্য বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুত করছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া এরই মধ্যে অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য একটি সম্ভাব্য ব্যয়সীমা নির্ধারণ করেছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যয় আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। এ অর্থের মধ্যে দারিদ্র বিমোচনে ১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা এবং নারী উন্নয়নে ৭৪৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়সীমা হচ্ছে ৪০ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা, আইন ও বিচার বিভাগে সম্ভাব্য ব্যয়সীমা ১ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা, জননিরাপত্তা বিভাগে ২৪ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যয়সীমা হলো ২৮ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।

সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হবে ৭৩১ কোটি টাকা। তবে এ অর্থের মধ্যে দারিদ্র বিমোচনে কর্মসূচি থাকবে ৬৮১ কোটি টাকা এবং নারী উন্নয়নে থাকবে ২৭৬ কোটি টাকা। একইভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্ভাব্য ব্যয়সীমা হচ্ছে ১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এই অর্থের মধ্যে দারিদ্র বিমোচনে ব্যয় হবে ৬৯৮ কোটি টাকা এবং নারী উন্নয়ন খাতে ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি টাকা।

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১৭ হাজার ৮২১ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য ২৬ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য শিক্ষায় ৭ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা সেতু বিভাগে ১০ হাজার ৮০২ কোটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ২১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগে সম্ভাব্য ব্যয়সীমা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য বিভাগে ২৮ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ৭১২ কোটি টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ব্যয়সীমা হচ্ছে ৮ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগে ৪১ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, অর্থ বিভাগ এরই মধ্যে আগামী বাজেটের এটি সম্ভাব্য কাঠামো প্রণয়ন করেছে। সেখানে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট ব্যয় ধরা রয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে নতুন অর্থবছর বাজেটে বাড়ছে ৭১ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ৪ লাখ ২৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার রয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।

পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী অর্থবছরে সরকার মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রার সম্ভাব্য আকার নির্ধারণ করেছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে রাজস্ব আদায় অঙ্ক ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধিও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে এমনটি আশা করছে অর্থ বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দারিদ্র বিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের কাজ চলছে। সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে মিল বা সামঞ্জস্য রেখেই প্রণীত হবে আগামী বাজেট। এতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বাড়বে। গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়বে। চলমান মেগা প্রকল্পেও বরাদ্দ বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।