কিছু পত্রিকা একদিন ভালো লিখলে ৭ দিন লেখে খারাপ: প্রধানমন্ত্রী

পত্রিকায় কী লিখছে তা দেখে না ঘাবড়াতে সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের কিছু পত্রিকা একদিন ভালো লিখলে পরের ৭ দিন খারাপ লিখবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই ওই পত্রিকা দেখে ঘাবড়ানোর কোনও দরকার নেই। আর পত্রিকা পড়েও সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার নেই। সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশের কথা চিন্তা করে। দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে।’

মঙ্গলবার (৭ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) নির্বাহী কমিটি-একনেক সভার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ওই বৈঠকে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘অনেক সময় পত্রিকা পড়ে আপনারা অনেকে ঘাবড়ান। এই পত্রিকা এই সমালোচনা করেছে। বাংলাদেশের কিছু পত্রিকা আছে, তারা সবকিছুতে একদিন ভালো লিখলে পরের ৭ দিন লিখবে খারাপ। এটা তাদের চরিত্র। আমি চিনি সবাইকে।’

নিজে পত্রিকা পড়ে সিদ্ধান্ত নেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হাইস্কুল থেকে তো রাজনীতি করি। সবাইকে আমার চেনা আছে। সব পরিবারকেও চেনা আছে। পত্রিকা পড়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার নেই। আমি সেভাবেই চলি। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছি বলেই আজকে দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে। আমি যদি ভয়ে ভয়ে থাকতাম, ও কী লিখলো, ও কী বললো, ও কী করলো; তাহলে কোনও কাজ করতে পারতাম না। নিজের বিশ্বাস হারাতাম।’

কর্মকর্তাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘অনেক সময় আপনাদের অনেকের মুখে শুনি, এই পত্রিকা লিখেছে, ওই পত্রিকা লিখছে। ওটা নিয়ে চিন্তাও করবেন না। নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলবেন। সেটাই আমি চাই। তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে।’

কাজের ব্যস্ততার মাঝেও একদিন আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে টকশো দেখার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ কেউ দেখলাম, ইদানীং একটা কথা খুব বেশি প্রচার করার চেষ্টা করছে। এটা হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। তারা টাকার অঙ্ক দিয়ে দেখাতে চাচ্ছেন যে এত টাকা খরচ করার দরকারটা কী ছিল। আমি শুধু এটুকুই বললো, আমরা যখন সরকার গঠন করে রেন্টে পাওয়ারপ্ল্যান্ট এনে কাজ শুরু করলাম, তখনও এরা বলছেন, এটার দরকারটা কী ছিল। এতে নাকি ভীষণ দুর্নীতি হচ্ছে। আর আজকে আমরা নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্ল্যান্ট তৈরিতে কাজ করছি, যেটা সব থেকে বেশি পরিবেশবান্ধব, কোনও পলিউশান নেই। এটা আনাতে খরচ বেশি, কিন্তু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। আর তাছাড়া আমরা তো এটা একটি দেশের সঙ্গে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ নিয়েই করেছি। সেখানে আমাদের টাকার অঙ্ক কম। আমরা টাকা পেয়েছি এবং সেটা আমাদের শোধ দিতে হবে ৫০ বছরে।’

যারা সমালোচনা করছে তারা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না পেলে এর চাহিদা বুঝতে পারতেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে। সেই বিদ্যুতের জোরে ঘরে ঘরে টেলিভিশন চলছে। আর এই বেসরকারি খাতে টেলিভিশন আমিই উন্মুক্ত করে দিয়েছি; সেখানে বসেই তারা সমালোচনা করে যাচ্ছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিই, তখনও সমালোচনা শুনতে হয়েছে। কিন্তু আজকে সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্ল্যাটফর্ম নিয়েই কিন্তু তারা আমাদের সমালোচনা করে যাচ্ছেন।’

কিছু লোক সবসময় সমালোচনা করাকেই অভ্যাসে পরিণত করেছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত ভালো কাজ করেন না কেন তারা সমালোচনা করবে। তারা নিজেদেরটা দেখে, নিজেদেরটা বোঝে; কিন্তু জনগণের ভালো-মন্দ বোঝে না। তবে আমরা তাদের মতো দুই-চার জন, যারা দেশের অর্থসম্পদ ভোগ করে, তাদের কথা ভাবি না; ভাবি দেশের তৃণমূলের মানুষ, যারা অসহায়, শোষিত, বঞ্চিতদের কথা। তাদের কল্যাণ যাতে হয়, আমরা সেটা দেখি। শুধু বড়লোকদের দুই-চারটা ছেলেমেয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করবে; আর আমার গ্রামের ছেলেমেয়েরা ব্যবহার করবে না, সেটা তো হয় না।’

তিনি বলেন, ‘যারা সমালোচনা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করেন, আমি তাদের বলবো, তাদের সংযতভাবে কথা বলা উচিত। মানুষকে খামোখা, অযথা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা না করা ভালো।’