‘হলি আর্টিজান হামলার পর জঙ্গি দমনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বেড়েছে’

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর জঙ্গি দমনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) নিজ দফতরে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি এ কথা জানান।  

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘হলি আর্টিজান একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা এবং আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা ছিল। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নের জন্য আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং এটি এখনও বলবৎ আছে। এটি বাস্তবায়নের সফলতার কারণে এর পরে আর এমন ঘটনা ঘটেনি।’

২০১৬ এর ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নশৃংস ও মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলায় ৯ জন ইতালিয়ান, সাত জন জাপানিজ, একজন ভারতীয়, একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকসহ মোট ২০ জন নিহত হন।

 

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি

হলি আর্টিজানে হামলার পর বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‌‘ওই ঘটনার পর থেকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ইউনিট, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে কাজ করছে, তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারপোল বা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’

সন্ত্রাসবাদের যে আন্তর্জাতিক মাত্রা সেটির প্রতি বাংলাদেশের নজর আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি বাংলাদেশে কোনও আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, সেটির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি ও যোগাযোগ দুটোই করা হয়েছে।’

এছাড়া, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিও জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্য জায়গায় যদি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে থাকে, তবে সেটির প্রতি আমাদের নজর থাকে, যাতে করে সেটির প্রভাব আমাদের দেশে না পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উদ্যোগগুলোতে আমরা নিয়মিত অংশগ্রহণ করি। সেখানে আমাদের সফলতা ও চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো আলোচনা করি।’

 

দেশীয় প্রস্তুতি

হলি আর্টিজান আমাদের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও দুঃখজনক ঘটনা ছিল উল্লেখ করে ইতালি ও জাপানে রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ করা মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বিদেশি নাগরিকদের প্রতি আচরণ এবং তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ট্র্যাক রেকর্ড অত্যন্ত ভালো।’

তিনি বলেন, ‘দেশীয় উগ্রবাদি ও সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা মোকাবিলা করার মতো প্রস্ততি আমাদের ছিল না। ওই সময়ে আমাদের প্রস্তুতি না থাকলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে বিষয়টি আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর তৎপরতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছিল।’

বিভিন্ন বাহিনীর কার্যক্রমের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন মহলও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পরিবার বা বাড়িওয়ালা বা প্রতিবেশী সন্দেহজনক কিছু নজরে আসলে সেটির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে থাকে বলে তিনি জানান।

 

বিদেশিদের আস্থা

হলি আর্টিজানের পর নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কার কারণে অনেক বিদেশি তাদের পরিবার নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা জানি যে, এরপর অনেক দেশের কূটনীতিক তাদের পরিবার দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল এবং অনেক দেশ তাদের ওয়াচলিস্টে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত করেছিল। সেগুলো গত কয়েক বছরে আস্তে আস্তে তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন ‍বিদেশিরা অনেক স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে।’

তিনি বলেন, ‘জাপানের সাহায্য সংস্থা-জাইকার ভলান্টিয়ারদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মধ্যে আছি। আশা করছি, অচিরেই তারা সীমিত আকারে ফেরত আসবে।’

এ বছর ভলান্টিয়ারদের আসা শুরু হবে কিনা জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘আমরা আশা করি। এ জন্য কাজ চলছে।’