‘সেই হাসি দেখে মনে হয়, বাবার আত্মা শান্তি পায়’

ভূমিহীনদের ঘর দেওয়া প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছি। নগদ টাকা ও জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করছি। একজন ভূমিহীন যখন ঘর পাচ্ছে, তার মুখে তখন যে হাসি, সে হাসিটা দেখলে আমার মনে হয়—আমার বাবার আত্মা শান্তি পায়। নিশ্চয়ই বেহেশতে থেকে তিনি দেখছেন। টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর লাশ রাখা হয়েছিল, যাতে কেউ যেতে না পারে। আজকে দেখুন টুঙ্গিপাড়ায় মানুষের ঢল।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে কত অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যে মানসিক যন্ত্রণায় আমাদের ভুগতে হয়েছে, কেউ তো বাদ যায়নি—আমার ছোট বোন, আমার ছেলে জয়, মেয়ে পুতুল, রেহানার ছেলে, উপদেষ্টা, মন্ত্রী, সচিব প্রত্যেকের ওপরে কী রকম দোষারোপ।  আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। জনতার শক্তি ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম—প্রমাণ করতে হবে দুর্নীতি হয়েছে। আমি দুর্নীতি করতে আসিনি। নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, নিজের টাকায় এই সেতু করবো। সেটা করেছি।’

বিশ্বব্যাপী নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, ‘করোনা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। এর ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে স্যাংশন দিয়েছে আমেরিকা রাশিয়ার ওপরে। এই স্যাংশন আর পাল্টা স্যাংশনের ফলে একদিকে জ্বালানি তেলের দাম হু হু করে বেড়ে গেছে। প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমরা যেসব পণ্য আমদানি করি প্রত্যেকটির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপর পরিবহন খরচও এমনভাবে বেড়ে গেছে যে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। আমরা তো আমরা। আজকে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপ প্রত্যেকটি জায়গায় বিদ্যুৎ রেশন হচ্ছে। খাবারের রেশন হচ্ছে। জার্মানিসহ ইউরোপের কোনও কোনও দেশে গরম পানি ব্যবহার করতে পারবে না। বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে না—এমন নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমরা বাধ্য হয়েছি তেলের দাম বাড়াতে। কারণ, জ্বালানির দাম সবসময় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হয়। বিশ্বব্যাপী ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরাও বাধ্য হয়েছি, টাকার মূল্য সামঞ্জস্য করতে। এদিকে তেলের দামও যখন বিশ্বব্যাপী বেড়ে গেছে, আমরা কত টাকা ভর্তুকি দেবো? এজন্য আমরা তেলের দাম বাড়িয়েছি। জানি আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পারি। কষ্টটা আমি বুঝি। এজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি—৫০ লাখ পরিবারকে মাত্র ১৫ টাকায় চাল সরবরাহ করবো। এক কোটি পারিবারিক কার্ড আমরা দেবো। এ দিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে চাল, ডাল, তেল ও চিনি কিনতে পারবেন।’

দেশের মানুষের পাশে থাকাটাকে নিজের কর্তব্য মনে করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাব দেখা যাচ্ছে। দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের এখানে কিছু করণীয় রয়েছে। কাজেই যারা বিত্তশালী আছেন, তাদের আহ্বান করবো— যারা একটু কষ্টে আছে তাদের পাশে দাঁড়ান। আমাদের পক্ষ থেকে যেটা করণীয় তা করবো। আমাদের নেতাকর্মীদেরও বলবো, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। বিদ্যুতের ব্যাপারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। এক ইঞ্চি ভূমি অনাবাদি থাকবে না। নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হবে। এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা নিয়ে দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের সহযোগিতা করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যা করণীয়, অবশ্যই তা করে যাচ্ছি এবং করে যাবো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। ইনশাআল্লাহ, এই যাত্রা কেউ আর থামাতে পারবে না।’