পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা করলেন সাবেক কূটনীতিকরা

শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে তিনি ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের এমন মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন সাবেক কূটনীতিকরা। তাদের মতে, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখবে বাংলাদেশের মানুষ, অন্য দেশ নয়। মন্ত্রীর মন্তব্যটি মর্যাদাহানিকর এবং ভারতীয়দের কাছে এ ধরনের কথা বলারই দরকার ছিল না।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘কী বলা যায় এবং কী বলা যায় না, সেটি মনে হয় তিনি মানেন না। তিনি যে ধরনের মন্তব্য করে থাকেন, সেটি কূটনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় হিসেবে গণ্য হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার চায়। সেই বিবেচনায় আওয়ামী লীগ তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য সেটি প্রতীয়মান। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের কাছে কেন এ ধরনের মন্তব্য করার দরকার পড়লো, সেটি বোধগম্য নয়। যদি তিনি বলেও থাকেন, তবে এটি প্রকাশ্যে বলা ঠিক হয়নি।’

ভারত একটি বড় দেশ এবং ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বড় দেশ ছোট দেশের ওপর প্রভাব রাখতে চাইবে এটি স্বাভাবিক। এমনটা জানিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তবে আমরা কতটুকু প্রভাবিত হবো বা হবো না, সেটি আমাদের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে।’

চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘এ ধরনের মন্তব্য সমীচীন নয় বলে মনে করি।’

মুনশি ফায়েজ বলেন, ‘তিনি কেন ভারতকে টিকিয়ে রাখার কথা বলতে যাবেন। শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখবে দেশের মানুষ। কথাটা বলা একদম ঠিক হয়নি।’

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এটি বিব্রতকর।’

তিনি বলেন, ‘কূটনীতিতে আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। কিন্তু আমরা একটি মানদণ্ড মেনে চলি। দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর এবং জটিলতা তৈরি করবে এমন বিষয় আমরা প্রকাশ্যে কখনই বলবো না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘এ ধরনের মন্তব্যে দেশের ক্ষতি হয়। কেন তিনি এ মন্তব্য করেছেন, সেটি খতিয়ে দেখার দরকার আছে। মনে হয় না তিনি দায়িত্বশীল মন্তব্য করছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যেকোনও মন্তব্য করার পেছনে একটি প্রেক্ষাপট থাকে। আমি ভিডিওটি দেখেছি। সেখানে তিনি আসামের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্য করেছেন। কিন্তু যে মন্তব্যটি তিনি করেছেন সেটি ঠিক হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেন এই বক্তব্য দিয়েছেন সেটার ব্যাখ্যা তিনি দেবেন।’

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা অনুরোধ করেছি।’

ভারত সফরের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'আমি বলেছি, আমার দেশে কিছু দুষ্ট লোক আছে, কিছু উগ্রবাদী আছে। আমার দেশ সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন না। আপনার দেশেও যেমন দুষ্ট লোক আছে, আমাদের দেশেও আছে। কিছুদিন আগে আপনাদের দেশেও এক ভদ্রমহিলা কিছু কথা বলেছিলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটি কথাও বলিনি। বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে, আমরা বলিনি। এ ধরনের প্রটেকশন আমরা আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি। সেটা আপনাদের মঙ্গলের জন্য, আমাদের মঙ্গলের জন্য। আমরা যদি একটু বলি, তখন উগ্রবাদীরা আরও সোচ্চার হয়ে আরও বেশি বেশি বলবে। তাতে দেশের আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটবে। আমাদের স্থিতিশীলতার বিঘ্ন হবে।'

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতকে বলেছি, আমরা উভয়ে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডকে কখনও প্রশ্রয় দেব না। এটা যদি আমরা করতে পারি, ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের মঙ্গল। শেখ হাসিনা আছেন বলে ভারতের যথেষ্ট মঙ্গল হচ্ছে। বর্ডারে অতিরিক্ত খরচ করতে হয় না। ২৮ লাখ লোক আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর ভারতে বেড়াতে যায়। ভারতের কয়েক লাখ লোক আমাদের দেশে কাজ করে। এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের সুন্দর অবস্থানের কারণে। সুতরাং আমরা উভয়ে এমনভাবে কাজ করবো যাতে কোনও উসকানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।’