প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের অবকাঠামো, শিল্প-কারখানা, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশকে বিনিয়োগের সবচেয়ে উদার দেশ হিসেবে বর্ণনা করে এই আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো, প্রকল্প, শিল্পকারখানা, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগ বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করবো। ভারতীয় বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কম সময়ে, সাশ্রয়ী ব্যয় ও স্বল্প সম্পদে উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়ের নিশ্চয়তাসহ বাই-ব্যাক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এই অঞ্চলের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে বিস্তৃত সুযোগ-সুবিধা, আকর্ষণীয় প্রণোদনা নীতি এবং ধারাবাহিক সংস্কার প্রক্রিয়ার সুযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে যে হোটেলে অবস্থান করছেন সেখানে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) যৌথভাবে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) এই অনুষ্ঠান হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শিল্প, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি এবং বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য মোংলা ও মিরেরসরাইতে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। আমি আজ এখানে উপস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেখানে বিনিয়োগ করার অনুরোধ করবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের সদিচ্ছাকে কাজে লাগানোর পথকে আরও প্রশস্ত করবে এবং এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনবে। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা তাদের পণ্য শুধু ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতেই নয়, নেপাল, ভুটান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও রফতানি করতে সক্ষম হবেন।
তিনি বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বাংলাদেশের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার এবং এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বল্প খরচ এবং বিশাল ভোক্তা ভিত্তির সুবিধা নেওয়ার সময় এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শিল্পের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং আমাদের কৌশলগত অবস্থানের পূর্ণ সুবিধা নিতে তারা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিত।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন এবং বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক ও চিকিৎসার জন্য রোগী আসে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক এখন বাংলাদেশে কাজ করছেন। তারা উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর বন্ধুত্বের বন্ধন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে এবং বিকাশ লাভ করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ জন্য উভয় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে ঘনিষ্ঠ হওয়া এবং আমাদের জনগণের পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত। এর মাধ্যমে আমরা এই অঞ্চলে সমৃদ্ধি ও শান্তি আনতে সক্ষম হবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়িক ইভেন্টে অংশগ্রহণ দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে আলোচনা ও ধারণা শেয়ার করার সুযোগ দেয়। ‘আমি বিশ্বাস করি সফল উদ্যোগ নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ী নেতাদের একে অপরকে জানার, ধারণার বিনিময় এবং নিজ নিজ অগ্রাধিকার, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো বোঝার সুযোগ করে দেয়। এই ইভেন্ট আশা করি আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ দুটির মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতিফলন ঘটাবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে গত সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিল্লি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন এবং দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন-
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করলেন রাহুল গান্ধী