নৌকায় বিদায় নেবেন দুর্গা, হবে বিজয় শোভাযাত্রা-সিঁদুর খেলা

মহালয়া থেকে দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আসার ঘণ্টা বাজে। ষষ্ঠীতে তিনি ভক্তদের মাঝে অধিষ্ঠিত হন। আর দশমীতে তিনি চলে যান কৈলাশ। আজ বিজয়া দশমী। দুর্গা মায়ের বিদায়ের দিন। তাই আজ ভক্তদের মনে বাজছে বেদনার সুর। হাতিতে চড়ে মা দুর্গা এসেছিলেন, ভক্তদের দুঃখ দূর করে দুর্গা এবার বিদায় নেবেন নৌকায়।

রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সকাল ৯টায় বিহিত পূজা ও পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দশমীর পূজা শেষ হচ্ছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, বিজয়া দশমীতে মা দুর্গা সব অশুভ শক্তি বিনাশ করে শুভ শক্তির সঞ্চার করেন। আমরা মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে এই পৃথিবীতে যেন সুন্দরভাবে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বসবাস করতে পারি,তার জন্য মায়ের কাছে আমাদের আকুল আবেদন। সকালে দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে মাতৃপূজা সম্পন্ন হবে। 

করোনা মহামারির কারণে সংক্রমণ এড়াতে গত দুই বছর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় গতবারের দুর্গোৎসবকে শুধু ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। করোনার কারণে তখন হয়নি বিসর্জনের শোভাযাত্রা, হয়নি সিঁদুর খেলা।

তবে এবার শোভাযাত্রা ও সিঁদুর খেলা দুটোই হবে বলে জানিয়েছেন মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন মন্ডল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সকালে দশমীর পূজা শেষে বিসর্জন হবে। এরপর আমাদের মা বোনেরা সিঁদুর খেলবেন। তারপর দুপুর তিনটার দিকে এখান থেকে শোভাযাত্রা শুরু হবে। শোভাযাত্রা যাবে পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে, সেখানে প্রতিমা বিসর্জন করা হবে। পাশাপাশি মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকার তুরাগ নদীতেও প্রতিমা বিসর্জন হবে। 

দেবীর বিদায়ের কষ্ট ভুলে থাকতে এবং হাসিমুখে বিদায় জানানোর জন্য ভক্তরা মত্ত হয়েছেন সিঁদুর খেলায়।

মুখ রঙিন করে হাসি মুখে মাকে বিদায় জানানোর জন্যই সিঁদুর খেলা। এছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিবাহিত নারীদের জন্য সিঁদুর একটি গুরুতপূর্ণ অংশ। তাই মাকে বিসর্জনের আগপর্যন্ত একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে মিষ্টিমুখ ও নাচ-গান করেন। যেন সারা বছরই এমন আনন্দে কাটে।

সধবা নারীর স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা নিজ কপালে সিঁদুর লাগান এবং সেই সিঁদুরের কিছু অংশ দিয়ে দেবীর চরণ স্পর্শ করে থাকেন। তারপর সবাই মিলে একে অপরকে সিঁদুর মাখেন। দুর্গা আগামী বছর আবার সাথে করে শাঁখা সিঁদুর সঙ্গে নিয়ে আসবেন এবং সেই শাঁখা সিঁদুর ধারণ করেই স্বামীর মঙ্গল হবে এই বিশ্বাসে ভক্তরা সিঁদুর নিয়ে দশমী উদযাপন করেন। এই উৎসবের নামই সিঁদুর খেলা।

এই সিঁদুর খেলা বিবাহিত নারীর জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও সকলেই মণ্ডপে ভিড় করেন নেচে গেয়ে এতে অংশ নেন। অবিবাহিতরা গালে আর হাতে মাখেন সিঁদুর।