পার্বত্য শান্তি চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস‍ প্রধানমন্ত্রীর

সংসদে প্রধানমন্ত্রীপার্বত্য শান্তি চুক্তির অবাস্তবায়িত ধারা দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  চুক্তির যেসব ধারা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি সেটা আমরা বাস্তবায়ন করবো। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবো।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চুক্তির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, এ সমস্যাকে আমরা রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখেছি এবং বলেছি মিলিটারির মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, আলোচনা করে সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, জনসংহতি সমিতি সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এই চুক্তি করেছিলাম। পৃথিবীর যেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে সেক্ষেত্রে কোনও তৃতীয় পক্ষ বা অন্যকোনও দেশকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কথা হলো তারা আমাদেরই লোক। পার্বত্যবাসী আমাদের দেশেরই নাগরিক। সুখ-দুঃখের সাথী। তাদের যদি কোনও দুঃখ থাকে তা নিরসনের দায়িত্ব আমাদেরই। তাদের ভালোমন্দ যদি আমরা না বুঝি বাইরের কেউ বুঝবে না। বরং তৃতীয় পক্ষ থেকে সমস্যা আরও জিইয়ে রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমরা তা চাইনি বলে নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে চুক্তি করেছি। চুক্তি যখন করেছি তা বাস্তবায়ন আমরা করবো।
তিনি বলেন, পার্বত্যবাসীর প্রতি সম্মান রেখেই আমরা এই চুক্তি করেছি। আমরা আরও আগে তা বাস্তবায়ন করতে পারতাম কিন্তু হাতে সময় ছিল না। কারণ চুক্তি করার পর আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করেছি, মন্ত্রণালয় গঠন করেছি। আঞ্চলিক পরিষদ বা তার চেয়ারম্যান আরও সক্রিয় হলে হাতে আরও সময় বেশি পেতাম।

তিনি বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় পার্বত্যাঞ্চল হতে অনেক অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরকালীন ২৩২টি অস্থায়ী ক্যাম্পের মধ্যে গত ১৭ বছরে কয়েকটি ধাপে অর্ধেকের বেশি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পার্বত্য চুক্তির অবাস্তবায়িত ধারাগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি চুক্তি যখন করেছি তা বাস্তবায়ন করবো। চুক্তির অধিকাংশ ধারা ইতোমধ্যে পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়েছে অথবা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যে ধারাগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী জানান, চার খণ্ডে বিভক্ত শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া ১৫টি ধারা আংশিক এবং ৯টি ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি জানান, চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ভারত প্রত্যাগত ১২ হাজার ২২৩টি উপজাতীয় শরণার্থী পরিবারকে ইতোমধ্যেই পুনর্বাসিত করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবাকে ৫০ হাজার নগদ টাকা প্রদান করা হয়েছে। ২০ বছর পূর্বে যারা চাকরির স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল তাদের পুনরায় চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিধিমালা শিথিল করে পার্বত্যবাসীদের পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীতে চাকরি দিয়েছি। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য যা যা করণীয় তা করেছি। 

উষাতন তালুকদারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, চুক্তির বিষয়গুলো এখনো হয়নি। সেগুলো করা হবে। তবে হস্তান্তর করতে গেলে তা ধারণ করা এবং কার্যকর ও বাস্তবায়ন করার সক্ষমতাও জেলা পরিষদকে আগে অর্জন করতে হবে। এজন্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদকে শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেসব কার্যক্রম করবেন তা আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে করবেন। আমরা সবাইকে নিয়ে ওই  অঞ্চলে কাজ করতে চাই।

/ইএইচএস/ এএইচ/