ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনে শেখ হাসিনা

‘ভোট নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আ. লীগকে ভোট দেয়’

বিএনপিকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট চুরি করলে জনগণ কখনও ছেড়ে দেয় না। আমাদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। আমরা ভোট চুরি করতে যাবো কেন? জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়।’

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোট নিয়ে সরকারে এসেছে। কখনও ভিন্ন পথে সরকারে আসেনি, আসবেও না।

আন্দোলনের মুখে একতরফা নির্বাচন করে ১৯৯৬ সালে বিএনপি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সেই সময় খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল রুদ্ররোষে। বিষয়টি তাদের জানা উচিত।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি (নির্বাচনে) জিতবে কীভাবে? ২০১৮ নির্বাচনে এক সিটে তিন জন করে নমিনেশন দেয়। এখানে ফখরুল একজনকে নমিনেশন দেয়, রিজভী আরেক দফা দেয়, আর লন্ডন থেকে তারেক দেয় আরও একজনকে। যে যত টাকা পায় সে তত জনকে নমিনেশন দেয়। সেখানে হলো টাকার খেলা। তারপরে শেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে, আমাদের নির্বাচন করতে দিলো না।’

হাসিনা-২

এসময় বিএনপির দুই জনের নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির অন্তত দুই জন নেতা এসে আমার কাছে নালিশ করে গেছেন। সিলেটের এনাম চৌধুরী এসে সোজা বললেন, আমার কাছে টাকা চেয়েছে তারেক জিয়া। আমি দিতে পারিনি, তাই আমার নমিনেশন বাতিল করে যার কাছে টাকা পেয়েছে, তাকে দিয়েছে। আমাদের মোর্শেদ খান, তিনি নিজে এসে বলেছেন, তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চেয়েছে। তিনি বলেছেন, আমি টাকা দিতে পারবো না। ব্যস, তার নমিনেশন ক্যান্সেল। এই হলো তাদের ২০১৮ সালের নির্বাচন।’

দেশের বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের যারা ইন্টালেকচুয়াল, তারা হয়তো ভুলেই গেছেন এই লেখাগুলো লিখতে যে ওইভাবে নির্বাচন করে জেতা যায় না। এটা হলো বাস্তবতা। সকালে একজনের নাম যায়, দুপুরে আরেকটা নাম যায়, বিকালে আরেকটা নাম যায়... এভাবেই তাদের ইলেকশন হয়। ফেলো কড়ি, মাখো তেল, অর্থাৎ যে টাকা দেবে সে প্রার্থী। যে দলের এই অবস্থা, তারা গণতন্ত্র উদ্ধার করবে! যাদের জন্মই হয়নি গণতন্ত্রের মাধ্যমে। জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে।

শেখ-হাসিনা-২

তবে তারা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কিছুটা রাজনীতি শিখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, কিছু রাজনীতি শিখেছে আমাদের সঙ্গে যৌথ আন্দোলন করে। কারণ, এরশাদবিরোধী আন্দোলন যখন করি ওই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কিছু শিখেছে। এটাই হলো বাস্তব কথা। তাছাড়া তাদের রাজনীতি কী ছিল?’ 

বিএনপি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিসহ অপকর্মের কারণে ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা আসে বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই জরুরি অবস্থার রাষ্ট্রপতি বিএনপির, প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন, মঈনুদ্দিন সবই বিএনপির সৃষ্টি। কিন্তু তারাই বাধ্য হয়েছিল ক্ষমতা দখল করতে। ক্ষমতা দখল করে তারা গ্রেফতার করলো আমাকে, ‍খালেদা জিয়াকে না। এটাই হচ্ছে আশ্চর্য। কারণ, আমি তাদের কিছু কাজের প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি সত্য কথা বলতে ভয় পাই না। তাদের মামলায় খালেদা জিয়া সাজা পেয়েছে।

খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার প্রশ্ন, অনেক জ্ঞানী-গুণী বিএনপির সঙ্গে হাত মেলায়। অনেক তত্ত্ব কথা শোনায়। গণতন্ত্রের সবক দেয়। গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায়। এরা নিজেদের বুদ্ধিজীবী বলে। আমি বলি বুদ্ধি প্রতিবন্ধীজীবী। তারা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে নেতা মেনে তাদের সঙ্গে জড়ো হয় সরকার উৎখাতের জন্য।

খালেদা জিয়া ও এরশাদ সরকার উৎখাতের আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। আন্দোলন শুরুর আগেই জিয়াউর রহমান মারা গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে একটা দুঃখ আন্দোলনটা গড়ে তোলার আগেই অক্কা পেলো। নিজের লোকদের হাতে। এই সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন যারা করেছে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা কেন?

বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখনকার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তো নতুন, পুরোনো যে নেতাকর্মী রয়েছে নিশ্চয়ই তাদের মনে আছে। খালেদা জিয়া হুমকি দিয়েছিল আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে তার ছাত্রদলই যথেষ্ট। ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল তারা।

প্রতিবাদে ছাত্রদের হাতে বই, খাতা, কলম তুলে দিয়েছিলেন বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শক্তি জনগণ। আমাদের পেটোয়া বাহিনী লাগে না। কিন্তু ছাত্ররা শিক্ষাগ্রহণ করে উপযুক্ত নাগরিক হবে। ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্বভার নেবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সঞ্চালনা করেন। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।