মাতৃভাষা দিবসে ‘পাহাড়ি’র স্বীকৃতি চাইছে দুই পারের কাশ্মীর

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিজস্ব জনগোষ্ঠীর ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে এবার সরব হলো কাশ্মীর। এবারের ২১ ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত উভয় অংশ থেকেই তাদের ‘পাহাড়ি’ ভাষার উপযুক্ত স্বীকৃতি দাবি করে জোরালো আওয়াজ উঠেছে। 

জাতিসংঘ গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে পালন করে এলেও কাশ্মীরে এই দিনটির সরব ও বর্ণময় উদযাপন এবারেই প্রথম হলো।

সুপরিচিত কাশ্মীরি অ্যাক্টিভিস্ট সর্দার আফতাব খানের কথায়, ‘কাশ্মীরিদের নিজস্ব মাতৃভাষা হলো পাহাড়ি, যেটিকে অনেকে ডোগরির একটি ডায়ালেক্ট বা উপভাষা হিসেবেও চেনেন। পাহাড়িসহ আরও যে সব ভাষা জম্মু ও কাশ্মীরে বলা হয়ে থাকে, সেই বৈচিত্র্যময় আর সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে মনে করিয়ে দেওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।’  

প্রবীণ এই সমাজকর্মী বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলছিলেন, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হিন্দি ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে উর্দুর দাপটে সীমান্তের দুপারেই ‘পাহাড়ি’ ক্রমশ বিপন্ন হয়ে উঠেছে।

যেমন, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সরকারি চাকরি পেতে হলে কাশ্মীরি যুবকদের একটা ন্যূনতম পর্যায়ের হিন্দি শিখতেই হয়। একইভাবে কাশ্মীরের যে অংশটা পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে (পাকিস্তান যাকে ‘আজাদ কাশ্মীর’ বলে অভিহিত করে থাকে) সেখানেও উর্দু বা পাঞ্জাবি শেখাটা একরকম বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে। দুই পারের কাশ্মীর থেকেই পাহাড়ি ভাষা শেখার পাট স্কুল-কলেজ থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তালাফি নিউজের বিশেষ ক্রোড়পত্র

এই কারণেই কাশ্মীরিরা তাদের মাতৃভাষা ‘পাহাড়ি’কে আবার আঁকড়ে ধরার কথা বলছেন এবং তারা এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্ল্যাটফর্মকেও পুরো মাত্রায় কাজে লাগাচ্ছেন। 

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ক্রোড়পত্র

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় দৈনিক ‘তালাফি নিউজ’ আজ তাদের পত্রিকায় মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একটি বিশেষ ক্রোড়পত্রও বের করেছে – যা কোনও কাশ্মীরি সংবাদপত্রের জন্য প্রথম।  

তালাফি নিউজ অবশ্য শুধু ‘পাহাড়ি’ নয়, পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে যে সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিভিন্ন ভাষা বা উপভাষায় কথা বলেন, সেই সব মাতৃভাষার রক্ষা ও লালনপালনের পক্ষেই কথা বলেছে।

যে পাকিস্তান সরকারের চাপিয়ে দেওয়া উর্দুর প্রতিবাদে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত, তার এত বছর বাদে সেই পাকিস্তানেই মাতৃভাষা রক্ষার এই দাবি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ সন্দেহ নেই। 

কাশ্মীর ডেভেলপমেন্ট ফোরামের টুইট

কাশ্মীর ডেভেলপমেন্ট ফোরামের টুইট

কাশ্মীরে সক্রিয় আর একটি বড় এনজিও ‘কাশ্মীর ডেভেলপমেন্ট ফোরাম’ও আজ এক বিবৃতিতে বলেছে, পাহাড়ি ভাষার মাধ্যমে যে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ধারার প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বহমান, এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। 

সব মিলিয়ে কাশ্মীর এবারের মাতৃভাষা দিবসে যেভাবে তাদের একান্ত নিজস্ব পাহাড়ি ভাষার সম্মান ও স্বীকৃতির দাবিতে সরব হয়েছে, তা একেবারেই অভূতপূর্ব।