সব ক্যাটাগরিতে টাকা বাড়ছে প্রায় দেড় থেকে দ্বিগুণ

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তির সংখ্যা ও টাকা বাড়ছে

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বাড়ছে। বৃত্তির সংখ্যা ও টাকার পরিমাণ দুটোই প্রায় দেড় থেকে দ্বিগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি বছর থেকেই বাড়তি এ অর্থ পাবে শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় বৃত্তিই দেয় মাউশি।

মাউশি

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর থেকে এ দুটি স্তরে সারাদেশে অতিরিক্ত আরও ৪১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হবে। এ জন্য এরই মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে মোট ৮২ হাজার ৫শ’ জনকে মাসিক বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মাউশির পরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বর্তমানে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু বৃত্তির টাকা ও সংখ্যার আগের মতোই ছিল। বৃত্তির পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অনেকদিন ধরেই পরিকল্পনা চলছিল। এখন সেই পরিকল্পনা সফল করা গেছে।

মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন উইং) আশিকুল হক বুধবার সকালে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রাথমিক স্তরে দুটি ভাগে বৃত্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে মেধাবৃত্তি (ট্যালেন্টপুল) ২২ হাজার ও সাধারণ বৃত্তি ৩৩ হাজার। এই ৫৫ হাজারের স্থলে নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, সারাদেশে ৮২ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হবে। তাদের মধ্যে ৩৩ হাজার পাবে মেধাবৃত্তি। বাকি ৪৯ হাজার ৫শ’ ছাত্রছাত্রী পাবে সাধারণ বৃত্তি।

প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) বর্তমানে বৃত্তিপ্রাপ্তদের এককালীন দেড়শ' টাকা দেওয়া হয়। চলতি বছর থেকে তা ২২৫ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া মেধাবৃত্তিপ্রাপ্তরা প্রতি মাসে বর্তমানের ২শ’ টাকার স্থলে ৩শ’ টাকা ও সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসিক দেড়শ' টাকার স্থলে ২২৫ টাকা পাবে। অন্যদিকে সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্তদের মাসিক ছিল দেড়শ’ এখন দেওয়া হবে ২২৫ টাকা।

অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে দুটি ক্যাটাগরিতে বৃত্তি দেওয়া হয়। বর্তমানে সারাদেশে ৩০ হাজার ৮০ ছেলেমেয়ে এ দুটি ক্যাটাগরিতে জুনিয়র বৃত্তি পায়। চলতি বছর তা বাড়িয়ে ৪৬ হাজার ২০০-তে উন্নীত করা হচ্ছে। মেধাবৃত্তির সংখ্যা নয় হাজার ৮শ’ থেকে বাড়িয়ে ১৪ হাজার ৭শ’ করা হয়েছে। আর সাধারণ বৃত্তির সংখ্যা ২১ হাজার বাড়িয়ে ৩১ হাজার ৫০০ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আগে মেধাবৃত্তিপ্রাপ্তরা এককালীন ৩৭৫ টাকা আর প্রতি মাসে ৩শ’ টাকা পেত। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে এখন তারা এককালীন ৬৫০ টাকা ও মাসে ৪৫০ টাকা হারে বৃত্তি পাবে। অন্যদিকে, সাধারণ ক্যাটাগরিতে বৃত্তিপ্রাপ্তরা আগে এককালীন ২২৫ টাকা ও মাসে ২শ’ টাকা পেত। এখন তারা এককালীন ৩৫০ টাকা আর প্রতি মাসে ৩শ’ টাকা হারে বৃত্তি পাবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানায়, সাধারণ ক্যাটাগরিতে সারাদেশের প্রতি ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড থেকে দুজন ছেলে ও দুইজন মেয়েকে সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে সাধারণ বৃত্তি দেওয়া হয়। আর প্রতি উপজেলায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতি ১শ’ জনের একজনকে মেধাক্রম অনুসারে মেধা বৃত্তি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে উচ্চ মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থী না পাওয়া গেলে ওই বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফল অনুযায়ী একটি মানদণ্ড ঠিক করে এ বৃত্তি দেওয়া হয়।

অন্যদিকে এবতেদায়ী, জেডিসি, এসএসসি, দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে মেধা ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে বৃত্তির টাকা ও সংখ্যাও প্রায় দেড় থেকে দ্বিগুন বাড়ানো হয়েছে। এবতেদায়ীতে দশ হাজার শিক্ষার্থীর স্থলে ১৫ হাজার জনকে সাধারণ বৃত্তি এবং ৫ হাজার শিক্ষার্থীর স্থলে ৭ হাজার ৫শ’ জনকে মেধাবৃত্তি ক্যাটাগরিতে বৃত্তি দেওয়া হবে। জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেটে (জেডিসি) ২ হাজারের স্থলে ৩ হাজার মেধাবৃত্তি এবং ৪ হাজারের স্থলে ৬ হাজার সাধারণ বৃত্তি ক্যাটাগরিতে বৃত্তি দেওয়া হবে।

আবার এসএসসিতে ২ হাজারের স্থলে ৩ হাজার মেধা বৃত্তি এবং ১৫ হাজারের স্থলে ২২ হাজার ৫শ’ শিক্ষার্থীকে সাধারণ ক্যাটাগরিতে বৃত্তি দেওয়া হবে। দাখিলেও ৪শ’ জনের স্থলে ৬শ’জনকে মেধা ক্যাটাগরিতে এবং ৫শ’ জনের স্থলে ৭শ’ পঞ্চাশ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব শ্রেণির সব ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের টাকার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে দেড় থেকে দ্বিগুণ।

মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন বলেন, বৃত্তির আওতা বাড়ানোর কারণে নতুন করে অনেক শিক্ষার্থী সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে অর্থের পরিমাণ বাড়ানোয় মেধাবী অথচ দরিদ্র শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

জানা যায়, জেএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়ের নম্বর বাদ দিয়ে মোট প্রাপ্ত নম্বরের ওপর ভিত্তি করে বৃত্তি দেওয়া হয়। জুনিয়র বৃত্তির এ টাকা শিক্ষার্থীরা কেবল নবম ও দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় পেয়ে থাকে।

/আরএআর/টিএন/