প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানা হয়নি ১০ বছরেও, ক্ষুব্ধ সংসদীয় কমিটি

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর ১০ বছর পার হলেও মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভিসের (এমইএস) ক্যাজুয়াল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি নিয়মিতকরণ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সম্প্রতি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের চাকরি নিয়মিতকরণ ও পেনশনভুক্ত করার সুপারিশ করে কমিটি।

বুধবার (১০ মে) অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, কমিটির আগের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। চাকরি ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে এমইএস শাখায় কর্মরত এমন চার হাজার ২৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পেনশনভুক্ত করার প্রস্তাব ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছিলেন বলেও সেই আলোচনায় উঠে আসে। বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে এমইএস কর্মকর্তাদের চাকরি নিয়মিতকরণ ও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনার জন্য সংসদীয় কমিটির সুপারিশ প্রত্যাশা করা হয়।

ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য ফারুক খান প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন থাকার পরও কেন অর্থ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ক্যাজুয়াল জনবলের সমস্যা সমাধান করতে পারছে না সেই প্রশ্ন তোলেন। বিষয়টি তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানানোর প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ হলে এমইএসের ক্যাজুয়াল জনবলের সমস্যাসমূহের বিষয়ে অবহিত করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে অনুরোধ করেন।

এছাড়া ক্যাজুয়াল সমস্যা সমাধানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সভার সিনিয়র সচিবের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণকারীদের পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে আসা উচিত।

সদস্য মো. নাসির উদ্দিন বলেন, এমইএসের ক্যাজুয়াল কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়ে থাকলে অর্থ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কেন সেটি বাস্তবায়ন করতে পারবে না তা বোধগম্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের বিষয়ে অন্য কারও হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকার কথা নয়। তিনি কমিটির পরবর্তী বৈঠকে অর্থ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবদের উপস্থিত হয়ে তাদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, বৈঠকে সিনিয়র সচিবের প্রতিনিধি এলে হবে না। তাদের বক্তব্য শুনে তারপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।

কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভুইয়া বলেন, একজন কর্মচারী একটি ডিপার্টমেন্টে ৩০ বছর চাকরি করার পরও স্থায়ী হতে পারবে না, এটা সমীচীন নয়। অর্থ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিধি মোতাবেক তাদের মতামত দিতে পারে। কিন্তু বাস্তবতার দিকটিও বিবেচনা করা উচিত।

পরে কমিটি বিষয়টি নতুন করে সুপারিশ আকারে নিয়ে আসে। এতে এমইএস শাখার ৪২৭৫ জন ক্যাজুয়াল কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি বিশেষ বিবেচনায় ও মানবিক কারণে নিয়মিত/পেনশনভুক্তকরণের জন্য অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে ২০১৬ সালের আগস্টের পরবর্তীকালে নিয়োগকৃত এমইএসের ক্যাজুয়াল কর্মচারীদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট হারে বেতন প্রদানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে মর্মে সুপারিশ করা হয়।

বুধবারের বৈঠকে এই সুপারিশ দুটির অগ্রগতি প্রতিবেদনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান বলে জানানো হয়।