সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যেসব সুবিধা পাবেন বেসরকারি চাকরিজীবীরা

বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সরকারের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চালু করা হয়েছে, ‘প্রগতি’ নামে একটি স্কিম। দেশের যেকোনও বেসরকারি সংস্থা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবে। কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি তাদের কর্মচারীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পেনশন স্কিমে অংশ না নেয়, তাহলে এর কর্মীরা স্বউদ্যোগে এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এই স্কিমের আওতায় বেসরকারি কর্মীরা মাসিক ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। চাঁদার ৫০ শতাংশ দেবেন কর্মীরা, আর বাকি ৫০ শতাংশ কোম্পানি পরিশোধ করবে। বেসরকারি কোনও কর্মী যদি ১৮ বছর বয়সে এ স্কিমে যোগ দেন এবং এরপর ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা জমা দেন, তবে ৬০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর তিনি প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা করে পেনশন পাবেন। একই মেয়াদে ৩ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স থেকে তিনি ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা করে মাসিক পেনশন পাবেন। আর ৫ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর তিনি আমৃত্যু ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা মাসিক পেনশন পাবেন। অর্থাৎ এই স্কিমে ৪২ বছর ধরে ৫ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা দেওয়া হলে ন্যূনতম ৭৫ বছর পর্যন্ত সময়ে পেনশন হিসাবে মোট পাওয়া যাবে ৩ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ টাকা, যা মোট চাঁদার প্রায় ১২ দশমিক ৩১ গুণ। তবে এ স্কিমে ১০ বছর ধরে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা করে চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়সের পর প্রতি মাসে পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৬০ টাকা। এ ক্ষেত্রেও মোট চাঁদার তুলনায় ২ দশমিক ৩০ গুণ বেশি পেনশন পাওয়া যাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কর্মরত মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগটি মহৎ। সে ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মচারীদের পক্ষে ৫০ শতাংশ চাঁদা পরিশোধের দায়িত্ব নিলে কর্মচারীরা উপকৃত হবেন। কারণ, কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী ৬০ বছর পর যখন চাকরি থেকে বিদায় নেন, তখন তাকে খালি হাতে চলে যেতে হয়। এখন এই কর্মসূচির আওতায় এলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ।’  

উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের দিন থেকেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংশ্লিষ্টরা। নির্ধারিত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও চাঁদা জমা করা শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাস হয়। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি আইনটিতে সম্মতি দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। পরে ১৩ আগস্ট স্কিমের বিধিমালা জারি করা হয়।

জানা গেছে, জাতীয় পেনশন কর্মসূচিতে (স্কিম) প্রথম দিনেই এক হাজার ৬শ’ জনের বেশি মানুষ তালিকাভুক্ত (এনরোল) হয়েছেন। তারা নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করে মাসিক চাঁদা পরিশোধ করে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। অপরদিকে এ সময়ে পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে ৮ হাজারের মতো নাগরিক নিবন্ধন করেছেন। বয়স্ক নাগরিকদের একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে এবং নিম্ন আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করতেই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা (স্কিম) চালু করে সরকার।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, অনলাইনে আবেদন ও পেমেন্ট সিস্টেম চালু থাকায় ২৪ ঘণ্টাই কার্যক্রম চলছে। প্রতি মুহূর্তেই নিবন্ধনকারী ও চাঁদা পরিশোধকারী ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। যারা চাঁদা দিয়ে এনরোল হয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে ইউনিক আইডি দেওয়া হচ্ছে। এই আইডি ব্যবহার করে পরবর্তী সময়ে তারা চাঁদা পরিশোধ করবেন। রবিবার (২০ আগস্ট) বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৯ হাজার ৭৪২ জন নিবন্ধন করেছেন। সরকারের এই কার্যক্রমটি উৎসাহব্যঞ্জক হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়বে বলেও জানিয়েছেন গোলাম মোস্তফা।

এছাড়াও সরকারের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় অতি দরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’ স্কিম, বিদেশে চাকরিরতদের জন্য ‘প্রবাস’ স্কিম, অনানুষ্ঠানিক খাত ও স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’ নামে  স্কিম রয়েছে।