ঢাকা ঘিরে এলিভেটেড সার্কুলার সড়ক তৈরির পরিকল্পনা জানালেন প্রধানমন্ত্রী

পুরো ঢাকা শহর ঘিরে এলিভেটেড সার্কুলার সড়ক তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কোনও জমি অধিগ্রহণ করে না, পুরো ঢাকা ঘিরে হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সেটার জন্য চিন্তা-ভাবনা আছে। আমরা কাজ করছি।’

শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর কাওলায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। গত শনিবার এই সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তারিখ পরিবর্তন করা হয়।

পদ্মা সেতু ঘিরে ষড়যন্ত্র হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক— দুর্নীতি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করতে আসেনি, মানুষের সেবা করতে ক্ষমতায় এসেছি। তাই আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, বলেছিলাম— বের করো তোমাদের ডকুমেন্ট, তোমরা দুর্নীতি পেয়েছো কিনা।’

তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার আমলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড, সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট, নাইকো, গ্যাটকো; সবকিছুতে তারা দুর্নীতি করেছে। বিদ্যুতে বিশ্বব্যাংক টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল, সড়কে টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল। ওদের (বিএনপি) ওই মেরুদণ্ড ছিল না, যে তারা চ্যালেঞ্জ করে। কারণ, তারা তো দুর্নীতিবাজই ছিল। জনগণের অর্থ আত্মসাত করেছিল। আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণ করে, সেবা করে। তাই আমরা চ্যালেঞ্জ করি। কানাডার আদালত রায় দেয়, বিশ্ব ব্যাংকের সব অভিযোগ ভুয়া।’

সরকারের তিন মেয়াদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ খান, উত্তর খানসহ বিভিন্ন জায়গায় রেললাইন আছে, এখানে অসুবিধা, যানজট হয়। যেখানে যেখানে রেলগেট, সেখানে আমরা ওভারপাস করে দেবো। যাতে যোগাযোগে অসুবিধা না হয়, রেলের জন্য আটকে না থাকতে হয়। কারণ সকলের সুযোগ-সুবিধা দেখার দায়িত্ব আমাদের।’ 

টানা ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, নৌকায় হচ্ছে একটি মার্কা, যে মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে, উন্নয়ন দিয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, পানির সমস্যার সমাধান করেছে, যোগাযোগ সহজ করেছে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় থাকলে সব হবে। আর ওই লুটেরা, খুনি, দুর্নীতিবাজ, চোর এরা ক্ষমতায় আসলে দেশকে ধ্বংস করে দেবে। আপনাদের কাছে ওয়াদা এরা যেন দেশকে ধ্বংস করতে না পারে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে একমাত্র নৌকা মার্কা। আপনাদের কাছে এটাই আমার আবেদন থাকবে। 

তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসবে কি, আসবে না, এটাতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে। খুব স্বাভাবিক তারা যে নির্বাচন করবে তাদের নেতাটা কে? তাদের প্রধানমন্ত্রী কে, প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? ওই দুর্নীতিবাজ পলাতক আসামি, নাকি এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী? সে নাকি যায় যায়। আরেকটা পলাতক। তাহলে কে করবে? এ জন্য তাদের চেষ্টা নির্বাচন বানচাল করার।’

তারা জানে নির্বাচন হলে নৌকা মার্কা ভোট পাবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে, দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তাই তারা নির্বাচনকে নষ্ট করতে চায়, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। এটা যেন করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। বিশেষ করে ঢাকাবাসী আপনাদেরও আমি সতর্ক করে দিচ্ছি। যেভাবে হোক এ দেশে নির্বাচন হবেই। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে। আমার একটাই কথা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছি। তারা ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। কিন্তু দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবো। আমরা চায় নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও যেন আপনাদের সেবা করতে পারি।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের কথাটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন— উন্নয়ন চাইলে নৌকা মার্কা, ধ্বংস চাইলে বিএনপি-জামায়াত। কাজেই সেই দিকে লক্ষ্য রেখে আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি নৌকা মার্কায় ভোট দেন, আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেন। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চায়, আপনারা সবাই কি নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন?‘

এসময় উপস্থিত জনতা হাত নেড়ে সমর্থন জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু নিজে দিলে হবে না, পরিবার-বন্ধু-বান্ধব-দেশে-বিদেশে প্রচার করতে হবে। এ দেশের উন্নয়নে একমাত্র আওয়ামী লীগই আছে, তারাই গণতন্ত্র দিতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি) বিদেশে, এখানে-সেখানে ধরনা দেয়। ওইসব ধরনা কাজে লাগবে না। জনগণের শক্তি বড় শক্তি। আমি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি, তাদের প্রতিই আমার আস্থা।’

এসময় মজুতদার ও কালোবাজারিদের প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ অনেক সময় দেখি, অনেকে কোনও কোনও জিনিস মজুত করে। এই মজুতকারী, কালোবাজারি যারা তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ খুঁজে বের করতে হবে কে? কোথায়? মজুত রেখে পেঁয়াজ পঁচাবে, ডিম পঁচাবে, আর মানুষকে বেশি দামে কিনতে হবে। এটা চলবে না। ওই মজুদ যারা করে তাদের খুঁজে বের করতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরা নেব। যথাযথ সাজার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায়।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি প্রমুখ।