কোনও প্রশ্ন করেননি বিদেশি কূটনীতিকরা

বিদেশি কূটনীতিকদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিতি ছিলেন।

প্রায় এক ঘণ্টার ব্রিফিংয়ে কোনও কূটনীতিক কোনও প্রশ্ন করেননি বা কিছু জানতেও চাননি। হঠাৎ করেই বিদেশি কূটনীতিকদের রবিবার (২৯ অক্টোবর) রাতে  আমন্ত্রণ জানানো হয়। কূটনীতিকদের এ ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।

বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের ডিপ্লোম্যাটিক ব্রিফিংটি খুব স্বল্প সময়ের নোটিশে করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সূচনা বক্তব্যে যা যা ঘটেছে, বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলা, জ্বালাও-পোড়াও, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ এবং গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকা, পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য যারা দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিলেন, তাদের যেভাবে মেরেছে, সেগুলো আপনাদের (গণমাধ্যমের) মাধ্যমে পাওয়া।’

ব্রিফিংয়ে আসা বিদেশি কূটনীতিকরা (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি যা সবার কাছে আছে, সেগুলো কূটনীতিকদের দেখানো হয়েছে এবং তাদের অভিব্যক্তি থেকে এটুকু বলতে পারি যে তারা স্তব্ধ হয়ে গেছেন বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।

তিনি বলেন, ‘তাদের কোনও প্রশ্ন ছিল না, তারা আমাদের এই প্রেজেন্টেশনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও প্রশ্ন করেননি। তারা শুনেছেন এবং তাদের আমরা লিখিতভাবে পুরো জিনিসটা দিয়েছি।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই ২৮ তারিখ রাতে তাদের ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলাম।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

বিভিন্ন দেশের বিবৃতি

২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক সহিংসতার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আলাদাভাবে এবং সাতটি দেশ একসঙ্গে যৌথ বিবৃতি দেয়।

এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সাতটি রাষ্ট্র মিলে যে বক্তব্যটি দিয়েছে, সেটি অতীতে তারা যে বিবৃতি দিয়েছিল, সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ধারাবাহিকতার অভাব আছে।’

তারা যেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়টি তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতেও তারা কিছু বলেননি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিবৃতি না দেওয়াটাই প্রথা কূটনীতিতে। কারণ আমরা মনে করি, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে কিছু কিছু রাষ্ট্র আগ বাড়িয়ে অতীতে একটি চল করেছে যে তারা বিবৃতি দেবে কিছু হলে। তার মানে এই না যে আমরা একই ধরনের বিবৃতি অন্য দেশের কাছ থেকে আশা করছি। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছু বলাটা প্রথা নয়।’

কূটনীতিকরা আশ্বস্ত হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেটি তাদের জিজ্ঞাসা করবেন।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখানে বলছি না যে তাদের নীরবতা মানে তারা সব বিষয়ে একমত হয়েছেন। আমরা এমনও বলছি না যে নীরবতা মানে তারা আমাদের সঙ্গে একমত না। আমরা যেটি বলছি—উনাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উনারা কোনও প্রশ্ন করেননি। তার মানে আমরা যতটুকু বুঝতে পারি, আমরা যে ব্যাখ্যা দিয়েছি—সেটি অন্ততপক্ষে পরিষ্কার হয়েছে। উনারা বিষয়টি মেনে নিয়েছেন বা নেননি, সেটি বলার দায়িত্ব আমার না। সেটি বলার দায়িত্ব উনাদের।’