‘ধ্বংসযজ্ঞ কীভাবে বন্ধ করতে হয় জানা আছে’

কানা-খোঁড়া যাকেই প্রার্থী করি, বিজয়ী করবেন: প্রধানমন্ত্রী

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমানে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে যাকেই প্রার্থী করি, সেটা কানা-খোঁড়া যেই হোক, তাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।’ এ সময় বিএনপি ‘ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ না করলে কীভাবে বন্ধ করাতে হয় সেটাও জানা আছে’ বলেও সতর্ক করেন তিনি।

শনিবার (৪ নভেম্বর) মেট্রোরেলের আগারগাঁও–মতিঝিল অংশের উদ্বোধন উপলক্ষে আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় জনসভায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

ঢাকাবাসীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট পেয়েছি বলেই আজ এত উন্নতি হচ্ছে; সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখে। আগামী নির্বাচনের তফসিল যেকোনও সময় ঘোষণা হবে। নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে, যাকেই প্রার্থী করি, সেটা কানা-খোঁড়া যেই হোক তাদের নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। করবেন কিনা হাত তুলে ওয়াদা করেন।’

সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এ সময় উপস্থিত জনতা হাত নেড়ে সমর্থন জানালে তিনি বলেন, ‘এবার নৌকা জিতবে। আবারও বলবো, এদেশের মানুষ যেন উন্নত জীবন পায় সেটাই চাই। আগামী নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সেটা আমরা ঠিক করে দেবো। যাকে মনোনয়ন দেবো, ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে। যেন আবার আমরা এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।’

নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত যেন দেশের মানুষকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারতে না পারে, অত্যাচার করতে না পারে তার জন্য সজাগ থাকতে হবে।’

‘আন্দোলন কীভাবে বন্ধ করতে হয় জানা আছে’

২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (পুলিশ) কি দোষ করেছিল? তারাতো চাকরি করে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেবে। অগ্নিসন্ত্রাস তাদের (বিএনপি) চরিত্র। তারা কথায় কথায় বাসে আগুন দেয়।’

মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

‘জ্বালাও-পোড়াও-ধ্বংস করা বিএনপির উৎসব’, বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘তাদের আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা করা। সবকিছু ধ্বংস করা। কেন ধ্বংস করবে, কে অধিকার দিয়েছে? তারা তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে সৃষ্টি। তাদের ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। এটা যদি বন্ধ করতে না পারে, কীভাবে বন্ধ করাতে হয়— সেটাও আমাদের জানা আছে। এটা আমরা ছাড়বো না।’

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগুন দিয়ে যারা পোড়াবে, তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। দরকার হলে তাদের ধরে ওই আগুনের মধ্যে ফেলতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। তবেই তাদের শিক্ষা হবে।’

বিএনপি নেতাকর্মীরা গাড়ি চড়ে কি না— সেই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের গাড়ি নেই? জিনিসপত্র নেই। জনগণ যদি সেগুলো পোড়াতে শুরু করে, তখন তারা কোথায় যাবে, কী করবে? সেটাও তাদের ভাবা উচিত। আমরা ওইসব বিশ্বাস করি না বলেই এখনও ধৈর্য ধরে আছে দেশের মানুষ। কিন্তু কতদিন?’

মেট্রোরেল উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

তিনি বলেন, ‘আজ জিনিসপত্র, খাদ্যপণ্য আসতে দেয় না। সেখানেও বাধা দেয়। আমি তাদের সাবধান করে দিচ্ছি, ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ ও এইদিকে জনগণের ভোট।’

বিএনপি ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, ওরা ষড়যন্ত্রের রাজনীতিই বোঝে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। কিন্তু এ ষড়যন্ত্র করে কোনোদিন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় বিদেশের মানুষের কাছে নালিশ করে। কারণ দেশের মানুষের কাছে ঠাঁই নাই। সেই জন্য বিদেশে নালিশ করাটাই তাদের বদভ্যাস। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আজকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো।’

মেট্রোরেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপম, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ প্রমুখ।