দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠমুক্ত করার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

কুষ্ঠরোগীদের চিকিৎসায় স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কারখানাগুলোকে উন্নতমানের ওষুধ তৈরির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কুষ্ঠরোগ নির্মূলে আমরা দৃঢ় অঙ্গীকার করছি।’

রবিবার (১২ নভেম্বর) সকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘দ্বিতীয় জাতীয় লেপরোসি (কুষ্ঠরোগ) সম্মেলন’ ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী ‘অ্যাপ্রোচ টু জিরো লেপরোসি বাই ২০৩০’-এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য তহবিল বৃদ্ধি করাসহ আরও সব রকম সহযোগিতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেন। তিনি দেশে উন্নতমানের যে ওষুধ কোম্পানি রয়েছে তাদের কুষ্ঠরোগের ওষুধ উৎপাদনেরও আহ্বান জানান।

সরকার কুষ্ঠ নির্মূল কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিরোধ করাটাই সবচেয়ে বেশি দরকার। কি কারণে হচ্ছে এবং এটা যেন আর না হয় সেদিকেই আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া দরকার।’

তিনি বলেন, কুষ্ঠরোগ শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্লান ফর লেপরোসি ইন বাংলাদেশ ২০২২-২০৩০’ প্রণয়ন এবং যথাযথভাবে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কুষ্ঠরোগীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার যে আইন করেছিল ‘দ্য লেপারস অ্যাক্ট ১৮৯৮’, আওয়ামী লীগ সরকার তা রোহিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাজেই এখন আর কেউ কুষ্ঠরোগীদের তাদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত করতে পারবে না। পরিবার থেকে শুরু করে আশপাশের আর কেউ তাদের ঘৃণার চোখে দেখতে পারবে না।’অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। কুষ্ঠ নির্মূলের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শুভেচ্ছাদূত এবং জাপানের নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইয়োহেই সাসাকাওয়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাগত বক্তৃতা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কুষ্ঠরোগীদের সহানুভূতি ও সেবা যেমন দরকার, তাদের পাশে থাকাও দরকার। তাদের মনোবল সৃষ্টি করা দরকার এবং সকলে সেটাই করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেনে। এটা ছোঁয়াচে রোগ বলে পুরোনো ভ্রান্ত ধারণা একসময় যেটা ছিল, সেটা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ অনেকেই এর থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং বের হতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি এবং এবং এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলছি। কাজেই এখন আর সেই পুরোনো ধ্যান-ধারণায় থাকলে চলবে না। তাহলে আমরা স্মার্ট হতে পারবো না,’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আজকের এই সম্মেলনের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠমুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণার বিদ্যমান সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হবে এবং অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা ও পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করতে পারবো।’ তিনি এ সময় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ দেশের সব নাগরিককে কুষ্ঠরোগীদের অবহেলা না করে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা

সরকার প্রতিবন্ধী, কুষ্ঠরোগী এবং তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসন ও জীবন-জীবিকার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এদের চাকরিতে পুনর্বাসন করা হলে ব্যবসায়ীদের করমুক্ত রেয়াত দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে ‘

প্রধানমন্ত্রী এ সময় আবারও মেডিক্যাল রিসার্সের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। দেশে আরও মেডিক্যাল রিসার্স খুব বেশি দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল সায়েন্সের ওপর রিসার্স দরকার, যেটা আপনারা একটু কমই করেন। দয়া করে যদি মেডিক্যাল সায়েন্সের ওপর রিসার্স করেন, তাহলে দেখবেন আমাদের দেশে জলবায়ুর সঙ্গে সম্পর্কিত যত রকম রোগ আছে, তার ওপর একটি ভালো ধারণা এনে এর যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারবো। এতে যে ধরনের ওষুধ বা যা যা দরকার, আমরা তৈরি করতে পারবো। এই অনুরোধটা আমার থাকলো।’

যারা কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে এসব রোগীকে যেন দূর দূর করা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করা না হয়, তিনি সেই অনুরোধও করেন। তিনি বলেন, আসুন, আমরা সবাই অবহেলা দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে আন্তরিকতা দেখিয়ে তাদের পাশে থেকে এই কুষ্ঠরোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলি। তারা আমাদেরই আপনজন। খবর বাসস