প্রায় লাখ কোটি টাকায় নির্মিত ১০ হাজার অবকাঠামো উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

‘শেখ হাসিনা সরণি’ (পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে) এবং চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ দেশব্যাপী ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৫৭টি প্রকল্পের ৫ হাজার ৩৬০টি অবকাঠামোর সমন্বিত উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই অনুষ্ঠানে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ৩৯৭টি ভূমিহীন এবং গৃহহীন পরিবারকে ঘরও ‍উপহার দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অবকাঠামোগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। এসব প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি ৩ লাখ টাকা।

অনুষ্ঠানে ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯ হাজার ৯৯৫টি অবকাঠামো নির্মাণ সমাপ্ত কাজের উদ্বোধন এবং ৪৬টি অবকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসব প্রকল্পের মধ্যে আরও রয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর নির্মিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ২৫৯টি ভবন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন ২ হাজার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চট্টগ্রাম বন্দর, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) এবং বাংলাদেশ স্থলবন্দরের ১৫টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রভৃতি।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় এসময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং খাদ্য মন্ত্রী সাধান চন্দ্র মজুমদার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও গণভবন প্রান্তে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ দেশব্যাপী ১০১টি প্রান্তে সুবিধাভোগীরা যুক্ত ছিলেন।

ছবি: ফোকাস বাংলা

অনুষ্ঠানে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী এসব প্রকল্প উদ্বোধনের সময় বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটেই বাবরবার নির্বাচিত হয়ে এসেছি। দীর্ঘসময় সরকারে থাকার কারণেই আমরা যেভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছিলাম সেভাবে করতে পেরেছি। বাংলাদেশকে দেখে এখন আর কেউ বলতে পারবে না এদেশ দরিদ্র দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, হাত পেতে চলার দেশ। আমরা এখন একটা মর্যাদাশীল দেশে পরিণত হয়েছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।’

প্রকল্পগুলোর মধ্যে শেখ হাসিনা সরণি নামকরণ করা পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েসহ ১৫টি প্রকল্প গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে সম্পন্ন হয়েছে এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

ছবি: ফোকাস বাংলা

এসময় প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন। এই চার প্রকল্পের মধ্যে একটির অধীনে কর্তৃপক্ষ সারা দেশে ২ হাজার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ভবন নির্মাণ করেছে। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১ হাজার ২৫৯টি ভবনও উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত চারটি ডে-কেয়ার সেন্টার ও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে দুটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও উদ্বোধন করা হয়। যেগুলো প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় নির্মিত।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঢাকায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ১২ দশমিক ৫ কিলোমিটার পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে (ঢাকার কুড়িল ফ্লাইওভার পয়েন্ট থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত) যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করা হয়েছে। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এক্সপ্রেসওয়েটিতে কোনও স্টপওভার পয়েন্ট, ট্রাফিক সিগন্যাল বা অন্য কোনও বাধা নেই। তাই যানবাহনগুলো তার পুরো দৈর্ঘ্য ছয় বা সাত মিনিটের মধ্যে চলতে পারে। এতে রাজধানী, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরণির দুই পাশে ১০০ ফুট চওড়া ও ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ খালের উদ্বোধন করেন।

ছবি: ফোকাস বাংলা

এছাড়াও ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ আট লেনের এক্সপ্রেসওয়ে, চার লেনের সার্ভিস রোড, নারায়ণগঞ্জের বালু নদী থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে এবং চার লেনের সার্ভিস রোডের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৮৪ দশমিক ৭৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় শেখ হাসিনা সরণির ওপর পাঁচটি ইন্টারসেকশন নির্মাণ, ১২টি সেতু, ছয়টি আন্ডারপাস, খালের ওপর আরো ১৩টি সেতু, ৩৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার হাঁটা পথ, ১২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর, দুটি স্লুইস গেট এবং ১১টি সাব স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি ১১৭০টি সড়ক বাতি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এদিন চট্টগ্রামে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) একটি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। সিডিএ প্রকল্পগুলো হলো, ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফৌজদারহাট-বায়োজিদ লিংক রোড, বাকালিয়া এক্সপ্রেস রোড। সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, জানে আলম দোভাষ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নামে সিডিএ প্রকল্পগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সিপিএ নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করে।