ভারত সফর নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র সচিব

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) তিন দিনের সফরে দিল্লি যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠকের পাশাপাশি দিল্লিতে অবস্থিত ৯০টি দেশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত, যারা সেখান থেকে বাংলাদেশের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত, ঢাকার অগ্রগতি সম্পর্কে তাদের জানাবেন পররাষ্ট্র সচিব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি রুটিন মেকানিজম। এখানে দুই দেশের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি।’

বৈঠকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন বলে তিনি জানান।

অগ্রাধিকার বিষয়গুলো হচ্ছে—রাজনৈতিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কানেক্টিভিটি বিষয়, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও অভিন্ন নদী সম্পর্কিত বিষয়, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়, উন্নয়ন ও প্রকল্প সহায়তা এবং কনস্যুলার ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা।

নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কোনও বার্তা নিয়ে যাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনও বার্তা নিয়ে যাওয়া বা এ সংক্রান্ত কিছু আমাদের এজেন্ডায় নেই।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জল্পনা-কল্পনা করতে পারেন। কিন্তু আমি যেভাবে বলেছি, সেভাবেই এজেন্ডা তৈরি হয়েছে। সুতরাং, প্রধানত গত ১০ মাসে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা এবং নির্বাচনের পরে বা আগামী বছরে কোন কোন জায়গায় আরও বেশি কাজ করতে পারি, সে জায়গা ঠিক করা—যাতে সময় নষ্ট না হয়।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে ঢাকায় ফরেন অফিস কনসালটেশন হয়েছে। সাধারণত বছরে একবার ফরেন অফিস কনসালটেশন হলেও বিশেষ প্রয়োজনে একাধিকবার হতে পারে।

কোনও লুকানো উদ্দেশ্য নেই

পররাষ্ট্র সচিবের ভারত সফরের সময়ে কোনও লুকানো (গোপন) উদ্দেশ্য নেই বলে জানিয়েছেন মাসুদ বিন মোমেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এ রকম মনে করার কারণ নেই যে এখানে লুকানো উদ্দেশ্য আছে। তবে যেহেতু সামনে নির্বাচন এবং তাদের পক্ষ থেকে যদি কিছু জানার থাকে, তবে সেটি আমি তাদের অবহিত করতে পারবো।’

নির্বাচনের আগে কেন এই বৈঠক, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক, যেমন- বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, ভিসা, এগুলো যাতে মসৃণভাবে চলে এবং নির্বাচন যেন কোনোভাবে প্রভাবিত করতে না পারে, সেটাই হয়তো আলোচনায় আসবে।’

কানেক্টিভিটি

দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে আলোচনায় কানেক্টিভিটি গুরুত্ব পেতে পারে।

কানেক্টিভিটিতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এখন গোটা বিষয়টি অনেক শেপে চলে এসেছে। উত্তর-পূর্ব ভারত, আমাদের মাতারবাড়ী এবং ধীরে ধীরে যে অগ্রগতি হচ্ছে, সেটি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। এখানে জাপানের সম্পৃক্ততা এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিকে আগ্রহ। আমাদেরও আগ্রহ আছে যে কী কী প্রকল্প নিতে পারি। ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকে আমরা বলেছি এবং সেই আউটলুককে কীভাবে আরও দৃঢ় করতে পারি, সেটার বিষয়েও ভারতের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ আছে।’

৯০ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক

৯০টি দেশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত দিল্লি থেকে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখাশোনা করেন জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমি একটি বৈঠক করবো। সেখানে ওইসব মিশন প্রধানদের আমাদের উন্নয়নের যে অগ্রগতি সেটি সম্পর্কে জানাবো। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বিশেষ করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সরকারের এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে তাদের অবহিত করবো।  নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে তাদের প্রশ্ন থাকতে পারে। কারণ, আমরা দেখেছি যে পর্যবেক্ষকদের আবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে। সুতরাং, এ বিষয়গুলো আমরা তাদের জানাবো।’