ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চায় সরকার

অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছর আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো ঢাকা সফর করেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী এপ্রিলে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরা সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য ঢাকা সফর করবেন। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দুটি অর্থনীতির মাধ্যমে ওই মহাদেশে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায় সরকার।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের সঙ্গে আমরা পরিচিত হলেও তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কম। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি।’

উল্লেখ্য, ব্রাজিল থেকে গুরুত্বপূর্ণ চারটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা হয়। সেগুলো হচ্ছে সয়া, সয়াবিন তেল, তুলা ও চিনি। এর পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ডলার। অন্যদিকে রফতানি করা হয় প্রধানত তৈরি পোশাক এবং এরে পরিমাণ ২০ কোটি ডলারের মতো। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার মতো বড় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ অত্যন্ত কম।

তুলা আমদানি

ব্রাজিল থেকে প্রতিবছর প্রায় ৫০ কোটি ডলারের মতো শুল্কমুক্ত তুলা আমদানি করে বাংলাদেশ। কিন্তু এর বিপরীতে তৈরি পোশাক রফতানি করার সময় শুল্ক দিতে হয় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্রাজিলে রফতানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে শুল্ক একটি বড় বাধা। আমরা ব্রাজিল থেকে আমদানি করা তুলা দিয়ে বানানো পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা অথবা যে পরিমাণ তুলা আমদানি করা হয়, সেই পরিমাণ তৈরি পোশাক শিল্প শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে– এই দুটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছি।’

দক্ষিণ আমেরিকার আরেকটি বড় অর্থনীতি হচ্ছে চিলি এবং দেশটি বাংলাদেশকে ২০১৪ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। এর মধ্যে ওইদেশে রফতানির পরিমাণ ব্রাজিলের সমান, অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি ডলার বলে তিনি জানান।

গরুর মাংস

বাংলাদেশে হালাল গরুর মাংস পাঠাতে চায় ব্রাজিল। এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পশুসম্পদে ব্রাজিলে অনেক উন্নত এবং বিভিন্ন দেশে তারা গরুর মাংস কম দামে সরবরাহ করে। বাংলাদেশকে তারা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে মাংস সরবরাহ করতে চায়।’

দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এ বিষয়ে সরকারের অনাগ্রহ আছে জানিয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তবে পুষ্টি নিরাপত্তা এখানে উপেক্ষিত হচ্ছে। বর্তমানে ৮০০ টাকা দরে বাংলাদেশের জনগণের একটি বিরাট অংশের পক্ষে মাংস কেনা সম্ভব হয় না। কিন্তু এর দাম যদি ৪০০ বা ৫০০ টাকা হয়, তবে বড় একটি অংশ আমিষের পুষ্টি পেতে পারে।’

ওষুধ

প্রতি বছর ৮০০ কোটি ডলারের ওষুধ আমদানি করে ব্রাজিল এবং ওই বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের সম্ভাবনা আছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতোমধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি ব্রাজিলের বাজার সম্পর্কে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং তাদের ওষুধ নিবন্ধনের চেষ্টা করছে।’

ব্রাজিলে ওষুধের নিবন্ধন পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হলেও বাংলাদেশি পণ্য সেখানে নিবন্ধিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে এবং সে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।