সিন্ডিকেট কি সরকারের চেয়ে শক্তিশালী, প্রশ্ন বিরোধীদলীয় উপনেতার

বাজার সিন্ডিকেট সরকারের চেয়ে শক্তিশালী কি না, সংসদে সেই প্রশ্ন রেখেছেন বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারেম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, শুল্ক কমানো হয়েছে যে জিনিসপত্রের দাম কমবে। জিনিসের দাম কমেনি। কেন দাম বাড়ছে? কেন আমরা সিন্ডিকেটকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। সিন্ডিকেট কি সরকারের চেয়ে শক্তিশালী?

সোমবার (৪ মার্চ) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

আনিসুল ইসলাম বলেন, মূল্যস্ফীতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মূল্যস্ফীতি এখন ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থা, ডলারের অস্থিতিশীল বিনিময় হার, রিজার্ভ হ্রাস মিলে সার্বিক অর্থনীতি অস্থিতিশীল। এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কোনও সমস্যা হলেই বলা হয় কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ। এটা বলে লাভ নেই। নিজেদের কাঠামোগত সমস্যা বের করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিটি দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বাংলাদেশ কেন পারছে না? এগুলো নিয়ে সংসদে কথা বলতে হবে।

এই সরকার শক্তিশালী উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম বলেন, সংসদে ১৩ জন ছাড়া সবাই সরকারি দলের। কেন সরকার চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারবে না? আশা করা হয়েছিল রমজানের আগে দ্রব্যমূল্য নিম্নমুখী হবে। কিন্তু তা হচ্ছে না।

অর্থপাচার নিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবছর অর্থপাচার হয়। কেন, কারা, কীভাবে অর্থ পাচার করছে, এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। এমনটা উল্লেখ বিরোধী দলের এই সংসদ সদস্য বলেন, বিষয় যতই খারাপ হোক না কেন, সংসদেই আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আনিসুল ইসলাম বলেন, উন্নয়ন টেকসই করতে হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিচার বিভাগের ওপর আস্থা বাড়াতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যেন ক্ষুণ্ন না হয়, তা দেখতে হবে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল এখানে এসেছে। তারা অ্যাপারেন্টলি ফর ডেমোক্রেসি, ফর ইলেকশন। আমি মনে করি না সেটা সত্য। তারা এসেছে তাদের ভূরাজনীর কারণে। তারা চায় বাংলাদেশকে কোনও একটি প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করতে। আমার একটাই অনুরোধ সরকারের কাছে, কোনোক্রমেই আমরা যেন মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জড়িত না হই। এটার সঙ্গে আমার দেশের অখণ্ডতা জড়িত আছে।

ডিসিরা ফিট নন মন্তব্য করে এবং নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার দাবি জানিয়ে আনিসুল ইসলাম বলেন, তাদের নিজস্ব লোকবল থাকতে হবে। ডিসিদের রিটার্নিং করা হয়। এটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য না। তারা সরকারের অংশ। তারা ফিট নন, এটাই বাস্তবতা।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল কারণ তারা সংবিধানে বিশ্বাস করে। তারা জানতো নির্বাচনে হয়তো ভালো ফল করতে পারবে না। তারপরও তারা গিয়েছিল যাতে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।

এদিকে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, আজ যারা গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের জন্ম কিন্তু গণতান্ত্রিক পন্থায় নয়? তাদের সংবিধানে (গঠনতন্ত্র) গণতান্ত্রিক ধারা নেই। তাদের দল পরিচালিত হয় এক আঙুলের ইশারায়। তারা গণতন্ত্র হত্যাকারী। তারা এ দেশে হোন্ডা, গুন্ডা দিয়ে ভোট ঠান্ডার রাজনীতি করেছিল।

তিনি আরও বলেন, যারা এ দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে রাজাকার, আলবদর সৃষ্টি করেছে, তারাই বারবার অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। তার সঙ্গে সেই আন্তর্জাতিক শক্তি জড়িত, যারা এ দেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেনি।

আমু বলেন, আজ এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সমস্ত জাতি যেমন ঐকবদ্ধভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সমর্থন দিয়েছে। আগামী দিনেও এই নেতৃত্বের মাধ্যমে আমরা অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।