যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারে সতর্ক বাংলাদেশ

জাতীয় স্বার্থ ও ভূ-রাজনীতি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে অপ্রথাগত নিরাপত্তা, যেমন–জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি বা খাদ্য নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী সরকার।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে প্রশিক্ষণ, তথ্য আদান-প্রদান, মহড়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা রয়েছে। এক্সেস ডিফেন্স আর্টিকেলের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বেশ কিছু প্রতিরক্ষা সামগ্রী দিয়েছে।’

উল্লেখ্য, বিদেশি সরকার বা আন্তর্জাতিক সংস্থাকে মার্কিন সরকারের প্রতিরক্ষা সহায়তা সম্পর্কিত এক্সেস ডিফেন্স আর্টিকেলের পাবলিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে নৌবাহিনীর জন্য দুটি কাটার (বিশেষ নৌযান), একটি সি-১৩০ হারকিউলিস বিমান এবং ৫৯টি মাইন প্রতিরোধক গাড়ি সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব সরঞ্জাম পুরনো এবং হস্তান্তরের সময়ে এগুলোর দাম ছিল ১০ কোটি ডলারের বেশি। এছাড়া সম্প্রতি প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র তাদের তৈরি অত্যাধুনিক ড্রোন বাংলাদেশকে দিয়েছে।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেকোনও দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক স্পর্শকাতর বিষয়। সেজন্য বাংলাদেশ অনেক ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ ফেলছে।’ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিসমিয়া) চুক্তি করার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ বিবেচনা করছে বলেও তিনি জানান।

আগ্রহী অন্যান্য দেশ

গত কয়েক বছরে জাপান ও ফ্রান্সের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিষয়ে দুটি সমঝোতা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ভারত ও চীনের সঙ্গে এর আগে থেকেই বাংলাদেশের চুক্তি ছিল। এছাড়া যুক্তরাজ্য, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসও বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি করতে চায়।

এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার জন্য অনেক দেশ বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।’

অর্থনৈতিক সম্পর্কেও আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

সম্প্রতি একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। তখন অর্থনৈতিক বিভিন্ন সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় সরকারের সঙ্গে।

মার্কিন দলের সঙ্গে আলোচনা সম্পর্কে জানেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে চিঠি লিখেছিলেন সেখানে নিরাপত্তা বিষয়টি প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু আলোচনায় তারা প্রথমে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি উত্থাপন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকে যেসব বিষয়ের কথা উল্লেখ আছে সেগুলোতে কাজ করতে আগ্রহী সরকার।’

উল্লেখ্য, মার্কিন রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র ডিরেক্টর এলিন লাউবাকেরের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় আসে।

পরিবর্তিত আচরণ

নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ হয়নি বলে ওয়াশিংটন একটি বিবৃতিও দিয়েছে। এরপরও রাজনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় দুই পক্ষ।

এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি পরিপক্ব ও অভিজ্ঞ দেশ এবং তারা বাস্তবতা অনুধাবন করতে সক্ষম। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেই তাদের কাজ করতে হবে এবং এটি তারা অনুধাবন করতে পেরেছে।’

মানবাধিকার, নির্বাচনসহ অন্যান্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের তেমন পরিবর্তন না হলেও বিষয়গুলোকে কম গুরুত্ব দিয়ে অন্যান্য সহযোগিতার ওপর জোর দেবে ওয়াশিংটন বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন-

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ‘নতুন অধ্যায়’: কী চায় দুই দেশ?

মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে যেসব বিষয়ে আলোচনা করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী