সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশনা

উপহার পাওয়া সামগ্রী জমা দিতে হবে তোশাখানায়

রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে পাওয়া উপহার সামগ্রী তোশাখানায় জমা দেওয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের লেখা একটি চিঠির সূত্র ধরে গত ১০ মার্চ আলাদাভাবে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের উপহার পাওয়া সামগ্রী তোশাখানায় জমা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব বা সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপহার পেলে এসব উপহারকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিবেচনা করা হয়। ফলে এসব সম্পদ সাধারণ জনগণকে প্রদর্শনের জন্য তোশাখানায় জমা রাখার বিধান রয়েছে। যদিও এই ধারা কতটা প্রতিপালিত হয় তা নিয়ে নানান জনের নানান প্রশ্ন রয়েছে।

সূত্র বলছে, তোশাখানা আইন মেনে এসব উপহার সামগ্রী রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে অনেকেই জমা দেন না। রাষ্ট্রীয় ব্যক্তি হিসেবে পাওয়া এসব উপহার তারা ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করে থাকেন, যা আইনগতভাবে উচিত নয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন গত ২০ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন আহমদকে একটি চিঠিতে তোশাখানায় সরকারি কর্মকর্তাদের পাওয়া উপহার সামগ্রী জমা দিতে অনুরোধ জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব তার লেখা চিঠিতে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আওতাধীন 'তোশাখানা' একটি রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডার, যেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাওয়া বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মূল্যবান উপহার সামগ্রী রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ১৯৭২ সালের ৫ম মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। তোশাখানা পরিচালনার জন্য তোশাখানা (রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশাসন) বিধিমালা, ১৯৭৪ প্রণীত হয় এবং ২০১২ সালে এই বিধিমালা হালনাগাদ করা হয়, বিধি প্রণয়ন করা হয়।

বঙ্গভবনে স্থাপিত তোশাখানার পাশাপাশি প্রাপ্ত উপহার সামগ্রী উন্মুক্তরূপে প্রদর্শনের জন্য ঢাকার বিজয় সরণিতে প্রায় ৫০ হাজার বর্গফুটবিশিষ্ট তোশাখানা জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে তোশাখানা জাদুঘর উদ্বোধন করেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে পাওয়া উপহার সামগ্রী তোশাখানায় প্রদান করলে জাদুঘরটি সমৃদ্ধ হবে এবং জনসাধারণ তা দেখার সুযোগ লাভ করবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের লেখা চিঠির সূত্র ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ২০ ফেব্রুয়ারি সব মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। ওই চিঠিতে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাওয়া আধাসরকারি পত্র অনুযায়ী তোশাখানা (রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশাসন) বিধিমালা, ১৯৭৪ (সংশোধিত ২০১২)-এর বিধি ৪(২) এবং বিধি ৪(৩) অনুসারে পাওয়া উপহার সামগ্রী রাষ্ট্রীয় তোশাখানায় জমা দেওয়ার বিষয়ে যেন নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়।

গত ১০ মার্চ মন্ত্রণালয়গুলো আলাদাভাবে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপহার পাওয়া সম্পদ তোশাখানায় জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।

একটি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, অনেকেই নানান সময় উপহার পান। কিন্তু তা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেন। এটা মোটেই উচিত না। দেরিতে হলেও এ ধরনের উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান। তবে এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেকে ভালোভাবে নেন না বলে তিনি মন্তব্য করেন।