ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি, মিয়ানমারে ফেরত যাবেন ২৮৮ জন

মিয়ানমারের রাখাইনে কারাগারে বন্দি ছিলেন ও নাগরিকত্ব যাচাই হয়েছে, এমন ১৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক বুধবার (২৪ এপ্রিল) ওই দেশ থেকে নৌপথে বাংলাদেশে ফিরেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের বিশেষ উদ্যোগে দেশে ফিরতে পারলেন তারা। মিয়ানমারের জাহাজ চিন ডুইন তাদের কক্সবাজার উপকূলে পৌঁছে দিয়েছে।

এছাড়া মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৮ জন মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা, ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য সদস্যকে বৃহস্পতিবার ও প্রয়োজনে শুক্রবার সে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কক্সবাজারে বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে তাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে আসা ওই একই জাহাজে মিয়ানমারের সেনা ও অন্যদের ফেরত পাঠানো হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের নাগরিকদের ফেরতের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একাধিক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে দুই দেশের নাগরিকদের প্রত্যাবাসন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে অবস্থিত মিয়ানমারের দূতাবাস ও ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনের প্রস্তাব করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ওই নাগরিকদের বাংলাদেশে যাচাই কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা হয়।

প্রথমে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কারাভোগ শেষ করেছেন অথবা সাধারণ ক্ষমা পেয়েছেন, এমন ১৪৪ জন যাচাইকৃত বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ তৎপরতায় মিয়ানমারে কারাভোগ শেষ, কারাভোগরত ও বিচারাধীন এমন সব বাংলাদেশিকে (যাদের নাগরিকত্ব যাচাই হয়েছে) বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সম্মত হয়। ফলে আরও ২৯ বাংলাদেশিকে মুক্তি দেয় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাসের যোগাযোগ এবং সিট্যুয়েতে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রতিনিধিরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে সমন্বয় করেন।

কক্সবাজার সদরের স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জেটিঘাটে উপস্থিত থেকে আগত বাংলাদেশি নাগরিকদের অভ্যর্থনা জানান। মিয়ানমারের জাহাজে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের ইমিগ্রেশন, স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম এবং মিয়ানমারের সেনা ও অন্য সদস্যদের পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, জেলা সিভিল সার্জন ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পাদনের পর বাংলাদেশি নাগরিকদের তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে জাহাজে আসা মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা আজ বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ক্যাম্পে অবস্থানরত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বিজিপি ও অন্য সদস্যদের দ্রুত শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন সম্পন্ন করবে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমার দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জাহাজে  আসা বিজিপি সদস্যদের কাছে আশ্রয়প্রাপ্তদের হস্তান্তর করা হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের বিজিপি ও সামরিক বাহিনীর ছয় শতাধিক আশ্রয়প্রার্থী সদস্যকে মানবিক বিবেচনায় আশ্রয়দান ও প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিজিবি তাদের মানবিক সহায়তা দিয়েছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগে তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।