জেন্ডার বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জেন্ডার বাজেট পরিকল্পনা আগের তুলনায় গুরুত্ব পেয়েছে।  উন্নয়ন এবং পরিচালন উভয় বাজেটে জেন্ডার সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ বাড়ানোর প্রবণতা দেখা গেছে। নতুন অর্থবছরের পরিচালন বাজেটে এক লাক্ষ ৬৫ হাজার ৪৮ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন বাজেটে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭১ কোটি টাকাসহ সর্বমোট জেন্ডার সংশ্লিষ্ট বাজেটে বরাদ্দ ২ লাখ ৭১ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে— যা মোট বাজেটের ৩৪.১১ শতাংশ। জিডিপির শতাংশেও জেন্ডারসংশ্লিষ্ট এই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।

সমতার পথে অগ্রযাত্রা

জেন্ডার বাজেটের গুরুত্ব বুঝাতে ‘সমতার পথে অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার নারীদের দক্ষ কর্মশক্তিতে রূপান্তরকে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছে। শিক্ষার মান উন্নয়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ, যাদের মধ্যে ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ কন্যা শিশু। এর কারণ হিসেবে উপবৃত্তি ও স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামকে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে ১ কোটি ৩০ লাখ  শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে, যা সরকার সরাসরি তাদের মায়েদের অ্যাকাউন্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠিয়ে থাকে।

জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সের তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে, বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ এবং পুরুষের পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে সমান সুযোগ দেওয়ার জন্য অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া নারীকে মূল কর্মশক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং পুরুষের তুলনায় নারীর আয়-বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে গুরুত্ব আরোপ করার বিষয়টিও চলমান রয়েছে।

প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের গুরুত্বের কথা উল্লেখ বলা হয়— বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের মার্চ মাসের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে যে— ২০২৩ সালে ১৫ বছরের কম বয়সি ৮ দশমিক ২ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়েছে, যা আগের বছরের ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়েছে। বাংলাদেশ কোন কোন জায়গায় সক্রিয় হলে এই সমস্যাটি মোকাবিলায় সক্ষম হবে, তার কর্মপরিকল্পনা উল্লেখ আছে।

কেন জেন্ডার বাজেট প্রয়োজন এবং সমাজে জেন্ডার বৈষম্যের অন্তর্নিহিত কোন কারণগুলো উপস্থিত, সেটিও প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। এতে বলা হয়, বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও প্রথাগত প্রতিবন্ধকতা নারীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করছে। এ প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে রয়েছে বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সে মাতৃত্ব, নিরাপত্তার অভাব, নারীর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি। উপবৃত্তি, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, মিড ডে মিল প্রোগ্রাম ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়ন সত্ত্বেও প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে-পড়ার হার এখনও প্রায় ১৫ শতাংশ। বাল্যবিবাহ, জেন্ডারভিত্তিক শ্রম বিভাজন, অল্প বয়সে গর্ভধারণের উচ্চহার, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যে প্রবেশগম্যতার অভাব, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাবে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এছাড়া গণিত, প্রকৌশল এবং আইটির মতো বিষয়গুলোতে মেয়েদের সক্ষমতা নিয়ে সংশয়ের কারণে এসব ক্ষেত্রে তাদের পেশা গড়ার স্পৃহা কমে যাচ্ছে।