দেশে দারিদ্র্য নিরসনে যে অর্জন তা টোকা দিলেই ভেঙে পড়বে। বাংলাদেশের অবস্থা এলডিসি (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি বা স্বল্পোন্নত দেশ) গ্রুপে থাকার মতো না। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে গেছে। এর থেকে উত্তরণে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও যথাযথ সংস্কার প্রয়োজন।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
এর আগে রবিবার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমি জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশ নিয়ে কাজ করি। আমি বলতে চাই, এটা (বাংলাদেশে) এলডিসি গ্রুপে থাকার মতো দেশ না। আমাদের সক্ষমতা, যোগ্যতা, স্থায়িত্ব, কার্যকারিতা এসব দিয়ে এলডিসি গ্রুপে থাকার মতো কারণ নেই।
বর্তমান সরকারকে আগামী দুই বছরের কর্মপরিকল্পনা তৈরির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা না গেলে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম করা যাবে না। বিগত সরকারের আমলে চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল পুরো কাঠামো।
শ্বেতপত্র কমিটির অন্যান্য সদস্যরা বলেন, পূর্বে দুর্নীতির একটা বড় অংশ দেশেই বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে ১০০ টাকা দুর্নীতি হলে ৬০ টাকায় দেশ থেকে পাচার হয়েছে। এসব পাচার হুন্ডি করে নয়, বরং প্রকল্পের মাধ্যমে এসব টাকা পাচার হয়েছে। সরকারি ব্যয়ের প্রায় ৪০ শতাংশই তছরুপ হয়েছে।
তারা বলেন, জ্বালানি ক্ষেত্রে নিজেদের প্রচেষ্টা বাদ দয়ে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। প্রযুক্তি খাতেও উল্লেখযোগ্য দুর্নীতি হয়েছে। মূলত বিভিন্ন পলিসি তৈরি করে দুর্নীতি করা হয়েছে।
তারা বলেন, মেগা প্রকল্পে যে লুটপাট হয়েছে তা কয়েক প্রজন্ম ধরে শোধ করতে হবে। তাই বৈদেশিক ঋণের সুদের হার, গ্রেস পিরিয়ড এগুলো নিয়ে বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। ঋণ পুনর্বিবেচনার কোনও বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সরকারকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি দেশের রাজস্ব বাড়াতে আয়কর আদায়ে জোর দিতে হবে।
শ্বেতপত্র কমিটি বলেন, বাংলাদেশের পদ্ধতিগত সংস্কার দরকার। হিসাব-নিকাশ, তথ্য-উপাত্তে ওপরের পর্যায়ে যে হস্তক্ষেপের সংস্কৃতি সেটির সবকটি দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।