ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবিক ভূমিকা পালন করেছে বিজিবি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.)  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সারাদেশে বিজিবি অত্যন্ত সহনশীল, মানবিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যেকোনও সময়ের চেয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

রবিবার (৮ ডিসেম্বর) বিজিবির সদর দফতর পিলখানার সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের স্বাবলম্বীকরণে বিজিবির সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, থানাগুলোকে কার্যকর, রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, কল-কারখানা সচল রাখাসহ পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ দমনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র-জনতার বিজয় অর্জনকে সুসংহত করতে বিজিবি সীমান্তে জোরদার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় অর্ধশত বিতর্কিত ব্যক্তির সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টাকালে আটক করে আইনের হাতে তুলে দিয়েছে বিজিবি। নতুন প্রেক্ষাপটে বিজিবি দেশের সীমান্ত রক্ষায় জোরদার ভূমিকা পালন করে বিগত ৩ মাসে সীমান্তে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চোরাকারবারিদের আটক ও বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চোরাচালানের মালামাল জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, রবিবার  বিকালে পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরের সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত হয়ে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্র-জনতাকে দীর্ঘস্থায়ী পুনর্বাসনে বিজিবির উদ্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.)  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ছাড়াও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও চিন্তক ফরহাদ মজাহার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মেজর আহমেদ ফেরদৌস (অব.), উইমেন সাপোর্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা তৌহদা হক, আহত ছাত্র-জনতা ও তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা মিজ ফরিদা আখতার বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসের উত্তাল সময়ে বিজিবির ইতিবাচক ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ছাত্র-জনতার বিজয় পরবর্তী সময়ে বিজিবির ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, গত দুর্গাপূজা উপলক্ষে সীমান্ত দিয়ে ভারতে ইলিশ পাচার রোধে বিজিবি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতেও ভারতে ইলিশপাচার রোধে বিজিবি আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কবি, লেখক, গবেষক ও চিন্তক ফরহাদ মজাহার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং মেজর আহমেদ ফেরদৌস (অব.) বক্তব্য রাখেন। বক্তারা জুলাই বিপ্লব ও বিজয় পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনমূলক বিভিন্ন কাজে বিজিবির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

বিজিবি মহাপরিচালক তার স্বাগত বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবে আত্মোৎসর্গকারী বীর যোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি এক নতুন বাংলাদেশের ঠিকানা পেয়েছে। সেই অভিষ্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিজিবিও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, জুলাই বিপ্লবের শুরু থেকেই বিজিবি স্ব-উদ্যোগে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে আন্দোলনে আহতদের  চিকিৎসাসেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫০ জন আহত ছাত্র-জনতাকে বিভিন্ন মেয়াদে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। সহযোদ্ধা হিসেবে আহত ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়াবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বিজিবি সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ১০৭ জন ছাত্র-জনতাকে পুনর্বাসন করার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৭ জন যোদ্ধাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদান ছাড়াও ইতোপূর্বে বিজিবির উদ্যোগে শহীদ আবু সাঈদ ফাউন্ডেশনে ৫ লাখ টাকা, জয়পুরহাটের শহীদ নজিবুল সরকার বিশালের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা এবং রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে ‘সবার ওপরে দেশ’ এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বিজিবির প্রতিটি সদস্য ‘সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে কাজ করবে বলে জানান বিজিবি মহাপরিচালক।