তিনি বলেন, ‘জোহা সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থেকে দেশের জন্য কাজ করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার কাছে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে যখনই কোনও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে, তখনই সে তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে।’
জোহা যাতে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন, সেজন্য তিনি প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
জোহার স্ত্রী ডা. কামরুন নাহার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে জোহার সঙ্গে মোবাইল ফোনে তার সর্বশেষ কথা হয়। জোহা তাকে জানিয়েছিলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফিরছেন। ওই সময় তিনি ক্যান্টনমেন্টের পার্শ্ববর্তী কচুক্ষেত এলাকায় তাদের অবস্থান বলেও জানান। জোহার সঙ্গে থাকা বন্ধুর নাম ইয়ামির আহমেদ। রাত দেড়টার দিকে ওই বন্ধু তাদের ফোনে জানান, জোহা অপহৃত হয়েছেন। এরপরই তারা কলাবাগান থানায় যান জোহার অপহৃত হওয়ার বিষয়টি অবহিত করে সাধারণ ডায়েরি করতে। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়, যেহেতু তিনি সর্বশেষ কচুক্ষেত এলাকা থেকে কথা বলেছেন, এজন্য কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে জোহার চাচা মাহবুবুল আলম সাধারণ ডায়েরি করতে কাফরুল থানায় যান। কাফরুল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাদের জানান, এটি ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় পড়েছে। সেখান থেকে ক্যান্টমেন্ট থানায় যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ঘটনাস্থল ভাষানটেক থানায় পড়েছে। পরে ওই থানায়ও যোগাযোগ করেন মাহবুবুল আলম। সেখান থেকেও বলা হয় ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় পড়েনি। তার প্রশ্ন, তাহলে ঘটনাস্থল কোথায় পড়েছে? হতাশ হয়ে দুপুরে কলাবাগানের বাসায় ফিরে আসেন মাহবুবুল আলম।
মাহবুবুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জোহার বন্ধু ইয়ামির আহমেদ তাদের জানান, একটি জিপ তাদের সিএনজির গতিরোধ করে, দু’জনকে অস্ত্রের মুখে সিএনজি থেকে নামিয়ে নেয়। পরে তাদের মাথায় কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। এরপর ইয়ামিরকে মানিক মিয়া এভিনিউতে এনে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে বলে দ্রুত চলে যা। কিন্তু জোহাকে কোথায় কারা নিয়ে গেলো সেটা আর তিনি জানাতে পারেননি।
জোহার স্ত্রী ডা. কামরুন নাহার কান্না জড়িত কণ্ঠে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জোহা প্রায়ই কাজ শেষে গভীর রাতে বাসায় ফিরতো। কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। মাঝে-মধ্যে এক-দু’দিন পরও বাসায় এসেছে। কিন্তু মোবাইলে যোগাযোগ ছিলো। কিন্তু এবারই প্রথম তার কোনও খোঁজ পাচ্ছি না।’
ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। তিনি সে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (প্রশাসন)।
তানভির হাসান জোহা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগে কাজ করেন। তবে প্রকল্পটি গত দুই মাস ধরে স্থগিত আছে। শিগগির এ প্রকল্প চালু হওয়ারও কথা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিভার্জ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ডলার সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তদন্তের কাজে প্রযুক্তি সহায়তা দিতে তাকে ওই কমিটিতে নেওয়া হয়।
সম্প্রতি জোহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি নিয়ে প্রকৃত তথ্য সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করায় একটি মহল আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা তদন্ত সহায়তা থেকে আমাকে সরিয়ে দিতে চাইছে। কারণ আমি অনেক বিষয়েই প্রশ্ন তুলেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আমন্ত্রণে আমি জঙ্গি তৎপরতাসহ সাইবার অপরাধের বড় বড় ঘটনা তদন্তে সহায়তা করেছি। তখন কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। এখন একটি মহলের স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা আমার বিরুদ্ধে লেগেছে।’
/এজে/