আফগানিস্তানে দুই কর্মকর্তাকে অপহরণ

ব্র্যাকের কেউ খোঁজ নেননি অপহৃতদের পরিবারের

ব্র্যাকের দুই কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ও হাজি শওকত আলী আফগানিস্তানে অপহরণ হওয়ার পর থেকে তাদের স্বজনরা চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা মধ্যে আছেন। অপহরণের খবর জানার পর থেকে থামছে না স্বজনদের কান্না। কিন্তু, এই চরম বিপদের দিনেও নিয়োগ কর্তৃপক্ষ ব্র্যাকের পক্ষ থেকে কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি এমন অভিযোগ করেছেন অপহৃতদের স্বজনরা।

আফগানিস্তানে অপহৃত ব্র্যাকের দুই কর্মকর্তা (বামে) প্রধান প্রকৌশলী হাজি শওকত আলী ও প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম সুমন

আফগানিস্তানে অপহৃত সিরাজুল ইসলাম সুমন পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া গ্রামের এজেম উদ্দিন খানের ছেলে এবং প্রতিষ্ঠানটির আরেক কর্মকর্তা হাজী শওকত ফরিদপুর উপজেলার হাঙরাগাড়ি গ্রামের মৃত মোস্তাক হোসেনের ছেলে। 

শনিবার পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া গ্রামে সুমনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী লতা খাতুন কাঁদছেন। আর তার বাবা-মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

পরিবারের অভিযোগ, শনিবার দুপুর পর্যন্ত  ব্র্যাক থেকে কেউ অপহৃত দুইজনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জানায়নি কোনও সহমর্মিতা। এ নিয়ে তারা হতাশ। প্রবাসে এমন অপহরণের ঘটনায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসীও। ব্র্যাকপরিবারের সদস্যরা জানান, দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সুমন তৃতীয়। ১০ বছর ধরে তিনি ব্র্যাকে চাকুরি করছেন। আফগানিস্তানে আছেন ২০১২ সালের শুরু থেকে। সর্বশেষ ছুটিতে গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর ফিরে যান কর্মস্থল আফগানিস্তানে। দুই বছর আগে বিয়ে করলেও সন্তান নেই তাদের সংসারে। আর অপহৃত অপরজন হাজি শওকতের বাড়ি জেলার ফরিদপুর উপজেলার হাঙরাগাড়ি গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত মোস্তাক হোসেন। শওকতের মা ও সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী থাকেন ঢাকার উত্তরায়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে আফগানিস্তানের কন্দুজ থেকে বাগলান এলাকায় যাওয়ার পথে অস্ত্রের মুখে ব্র্যাকের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম সুমন ও প্রধান প্রকৌশলী হাজি শওকতকে অপহরণ করে বন্দুকধারীরা। বৃহস্পতিবার রাতে আফগানিস্তান থেকে ফোনে সুমনের সহকর্মী শহিদুল ইসলাম পরিবারকে অপহরণের ঘটনা জানান।

সুমনের স্ত্রী লতা খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আফগানিস্তান থেকে শহিদুল ইসলাম আমাকে ফোন করে জানান আমার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে। এরপর থেকে আমি কোনও কিছু ভাবতে পারছি না। এখন কিভাবে আমার স্বামীকে ফিরে পাবো? কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন,‘ আমি আমার স্বামীকে সুস্থ শরীরে ফিরে চাই।’  

অপহৃত ব্র্যাক কর্মকর্তা সুমনের পরিবারের আহাজারি

সুমনের বৃদ্ধা মা শাহনাজ পারভীন সরকারের কাছে তার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। সেগুলো পূরণ হয়নি। সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমার ছেলেকে আমার কোলে ফিরিয়ে দেন।’

বাবা এজেম উদ্দিন খান বলেন, ঘটনা জানার পর থেকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। ছেলে অপহরণের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কে আছি।

অপরদিকে ফরিদপুর অপহৃত হাজি শওকত আলীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ভায়রা আবু বকর সিদ্দিক জানান, ‘অপহরণের ঘটনার কথা আমরাও শুনেছি। শোনার পর থেকে আমরা খুব টেনশনে আছি।’

আবু বকর সিদ্দিক আরও জানান, শওকত আলীর মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ের সবাই ঢাকার উত্তরায় বসবাস করেন। ফরিদপুরে কেউ থাকেন না।’

প্রবাসে এমন অপহরণের ঘটনায় আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন শওকতের এই স্বজনসহ এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত তাদের সুস্থভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে ব্র্যাক ও সরকারকেই।

 

/জেবি/টিএন/