এর আগে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার লুৎফর রহমান স্বর্ণ চোরাচালানে বিমানের কর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নোটিশ করেন। বিমান কর্তৃপক্ষকে সেই ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের নামের তালিকাসহ ১৫ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতেও বলা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দর সিভিল এভিয়েশন অথরিটির হলেও কোনও ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই এককভাবে দুই ধরনের হ্যান্ডেলিং করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের আওতায় বিভিন্ন এয়ারলাইনস ও যাত্রীদের লাগেজসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের আওতায় ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানিতে সেবা দেওয়া হয়। বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিনই যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের মালামাল চুরি হচ্ছে। অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। এসব ঘটনার জন্য বিমানবন্দরে আমদানি-রফতানিতে কার্গো হ্যান্ডলিং ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং এজেন্ট হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দুষছেন যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা।
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ (এএপি) সূত্র জানায়, গত ১৫ মার্চ এক যাত্রীর মোবাইল চুরির দায়ে ১ বিমানকর্মীকে আটক করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ০৫ নম্বর বোর্ডিং ব্রিজে বিজি-০২৬ ফ্লাইট ওই সময়ে দোহা থেকে ঢাকায় এলে মালামাল নামানোর সময় বিমানের ভেতর থেকে ৩টি মোবাইল ফোন চুরি করেন বিমানের ট্রাফিক হেলপার কাউছার ইসলাম (আইডি নম্বর-১০০৪৪)। যার মধ্যে একটি ইএনইএস মোবাইল, দুটি স্যামসাং মোবাইল ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তল্লাশির সময় কাউছারের কাছে মোবাইল ফোনগুলো পাওয়া যায়। তাকে আটক করে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পাঠায়। আদালত বিমানকর্মী কাউছারকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। ইতোমধ্যে যাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমান বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেই যাত্রীর প্রতিনিধিকে মোবাইলগুলো ফেরত দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিমানের ট্রাফিক হেলপার কাউসারের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এসেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আরও সিকিউরিটি সেকশনের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী চুরির সঙ্গে জড়িত। বিমানবন্দরের ভ্রাম্যমাণ আদালত কাউসারের সাজা দেওয়ার আদেশে ‘চুরির সঙ্গে জড়িত বিমানকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে’ নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই আদেশের কপি বিমানের এমডির কাছে সোমবার পাঠানো হবে।
ঢাকা কাস্টম হাউজ সূত্র জানায়, গত বছর ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার লুৎফর রহমান বিমানের বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নোটিশ করেন স্বর্ণ চোরাচালানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ এনে। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে আসা বিমানের একটি ফ্লাইটে টয়লেটসহ বিভিন্ন স্থানের স্ক্রু খুলে ৬২.৩৭৭ কেজি স্বর্ণ ও ৩৯৭ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারের ঘটনা নোটিশে উল্লেখ করা হয়। যাত্রী নামানোর পর বিমানটির বিশেষ স্থান থেকে স্বর্ণ উদ্ধার হওয়ায় চোরাচালানের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের কর্মীরা জড়িত বলে মনে করছে কাস্টম হাউজ। বিমান কর্তৃপক্ষকে এ ঘটনায় তদন্ত করে দোষীদের নামের তালিকাসহ নোটিশের জবাব ১৫ দিনের মধ্যে দিতেও বলে কাস্টম হাউজ।
একই সঙ্গে, যদি বিমান দোষীদের তালিকা দিতে ব্যর্থ হয় এবং কর্মীদের নির্দোষ প্রমাণে ব্যর্থ হয়, তাহলে কেন বাংলাদেশ বিমানের ওপর অর্থদণ্ড আরোপ করা হবে না তারও জবাব দিতে বলা হয় নোটিশে। জবাব দিতে ব্যর্থ হলে মামলার গুণাগুণের ভিত্তিতে একতরফা আদেশ দিয়ে নিষ্পত্তি করা হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘বিমানের একটা বিশাল সিকিউরিটি বাহিনী রয়েছে এ অপরাধ রোধে। তারা সৎভাবে কাজ করলে একটা লাগেজ চুরি বা কাটার ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু বেড়ায় ক্ষেত খেলে তো কিচ্ছু করার থাকে না। এ পর্যন্ত বিমান সিকিউরিটি একজন অপরাধীকেও আদালতে সোপর্দ করেনি। বিমানের এই লাগেজ চুরির দায় আইনত বিমান সিকিউরিটির ওপর বর্তায়।’
/এজে/