সংবাদ সম্মেলনে জোহার চাচা

‘ধারণা করছি ডিবির লোকেরাই জোহাকে বাসায় দিয়ে গেছেন’

জোহার চাচা মাহবুবুল আলম
প্রায় এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা তার বাসায় ফিরে এসেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যর তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন। কলাবাগানের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে জোহার চাচা মাহবুবুল আলম বলেন, ‘যারা জোহাকে পৌঁছে দিয়ে গেছেন তারা কোন বাহিনীর লোক তা জানাননি। তবে আমরা ধারণা করছি তারা ডিবির সদস্য।’ বুধবার বেলা ১২টার দিকে ওই সংবাদ সম্মেলনে জোহা উপস্থিত ছিলেন না।

মাহবুবুল আলম (বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক উপমহাপরিচালক) বলেন, ‘গত ১৬ মার্চ অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে জোহা নিখোঁজ হন। প্রায় এক সপ্তাহ তিনি নিখোঁজ ছিলেন। আমরা উদ্বিঘ্ন ছিলাম। তার মা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বারান্দায় বসে থাকতেন। মঙ্গলবার দিনগত রাত একটা-দেড়টার দিকে কলিংবেল বাজে। সাদা পোশাকের কয়েকজন তাকে দিয়ে যান। তারা নিজেদের পরিচয় জানাননি। তবে আমাদের ধারণা তারা হয়তো ডিবির সদস্য।’

যারা জোহাকে বাসায় দিয়ে গেছেন তারা রাজধানীর এয়ারপোর্ট এলাকায় তাকে ঘোরাফেরা করতে দেখে উদ্ধার করেন বলেও জানান মাহবুবুল আলম।

জোহাকে কেন সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়নি, এই প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল আলম জানান, জোহা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। তার গায়ে কোনও নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কারা তাকে নিয়ে গিয়েছিল সেব্যাপারেও তিনি কিছু জানাননি। তবে সুস্থ বোধ করার পরপরই তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।

জোহার চাচা আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসহযোগিতার কারণে থানায় মামলা বা জিডি করা যায়নি। তবে তাদের সহযোগিতায়ই আবারও তাকে ফেরত পাওয়া গেলো।

জোহার বিষয়ে খবর প্রচার করায় মিডিয়ার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জোহার পরিবার। মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এভাবে যেন আর কেউ নিখোঁজ না হয়।’

উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ জোহার পরিবারের সদস্যরা জানান, রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিকশা থেকে নামিয়ে তাকে অপহরণ করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার আগে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন জোহা। তবে তাকে অপহরণ করা হয় নাকি কোনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে আটক করে সেব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য দিতে পারেননি তারা।

তানভীর হাসান জোহা
তানভির হাসান জোহা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ডলার চুরির বিষয়ে তদন্তে সংশ্লিষ্ট থাকার দাবি করেছিলেন। এটিএম বুথ কেলেঙ্কারিসহ সাম্প্রতিক বেশকিছু স্পর্শকাতর ঘটনায় দেশের আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তাও দিয়েছিলেন তিনি।
জোহা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প ‘সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ’-এর ডিরেক্টর (অপারেশন) হিসেবেও কাজ করেন। তবে এই প্রকল্পটি গত দুই মাস ধরে স্থগিত আছে। শিগগির এ প্রকল্প চালু হওয়ারও কথা রয়েছে।
নিখোঁজ হওয়ার আগে জোহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি নিয়ে প্রকৃত তথ্য সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করায় একটি মহল আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা তদন্ত সহায়তা থেকে আমাকে সরিয়ে দিতে চাইছে। কারণ আমি অনেক বিষয়েই প্রশ্ন তুলেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আমন্ত্রণে আমি জঙ্গি তৎপরতাসহ সাইবার অপরাধের বড় বড় ঘটনা তদন্তে সহায়তা করেছি। তখন কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। এখন একটি মহলের স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা আমার বিরুদ্ধে লেগেছে।’


/জেইউ/এফএস/