আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় দেশের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে: প্রেস সচিব

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আমার মনে হয়, আমাদের পুরো সোসাইটি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সবাই কিন্তু এটা গ্রহণ করে নিয়েছে।  আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটা ইউনিভার্সেলি অ্যাকসেপ্ট হয়েছে। কোথাও কিছু দেখেছেন? পুরো বাংলাদেশের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে।

সোমবার (১২ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

‘সাংবাদিকদের ভূমিকা রিভিউ করা হবে’ মন্তব্য করে শফিকুল আলম বলেন, জাতিসংঘের অফিসকে আমরা একটি চিঠি দিচ্ছি। এটা আজ কালকের মধ্যে যাবে। চিঠিতে আমরা বলছি, তারা যেন একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক্সপার্ট নিয়ে এসে বাংলাদেশের জার্নালিজম কীভাবে ব্যর্থ হয়েছে গত ১৫ বছরে... আমরা চাই এটা নিয়ে রিভিউ করতে।

তিনি বলেন, হাসিনার কু-প্ররোচনায় কীভাবে সাংবাদিকরা মানুষকে জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে তাকে কিলিংয়ের বৈধতা দিয়েছে, এই কাজগুলো কারা করেছে? অনেক ক্ষেত্রে একটা ভালো লোক বা আমি জানি তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই, তাকে জঙ্গি ট্যাগ করে দিলেন। এটার মানে কী, আপনি রাষ্ট্রকে প্ররোচণা দিচ্ছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, তাকে মেরে ফেলতে। এই কাজগুলো তো হয়েছে। আমাদের জার্নালিজমের ফেইলিওর তো অনেকগুলো ছিল।

আপনাদের গণতন্ত্র চলে গেলো, তিনটা ভয়াবহ রকমের ভুয়া নির্বাচন হলো।  প্রত্যেকটা সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সাংবাদিকদের ভূমিকা কিন্তু সামনে আসে। অনেকেই এখন সুশীল সাজেন। তো এই ফেইলিওরগুলো আমরা জানতে চাই। যে কোথায়-কোথায় জার্নালিজমের ফেইলিওর হয়েছে, সেটা নিয়ে ইউএনকে আমরা চিঠি দেবো।

শেয়ার মার্কেটে যাতে ডাকাতদের আড্ডাখানা না হয়

অনেকদিন ধরেই শেয়ারবাজারে অস্থিরতা চলছে। কয়েকদিন ধরে অব্যাহত দরপতনও হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রেস সচিব বলেন, কবে শেয়ারবাজার ঠিক হবে সে টাইমলাইন আমি বলতে পারবো না। এগুলোর তো কিছু প্রাক্টিক্যাল কিছু বিষয় আছে। ইচ্ছা করলেই আপনি বললেন যে, কালকে আনবো, আনা তো যায় না।

প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কাল বলেছেন যে, শেয়ার মার্কেটে যাতে একটা মিনিংফুল রিফর্ম হয়৷ এমন যেন ব্যবস্থা না হয়, যে আমি এক ডাকাতকে সরিয়ে আরেক ডাকাতকে আনলাম। এবং আরেক ডাকাত এসে প্রথমে কিছু মেজার নিলেন, শেয়ার মার্কেট কিছুটা ভালো হলো, সবাই খুশি হলেন।

শফিকুল আলম বলেন, শেয়ার মার্কেটটা যাতে ডাকাতদের আড্ডাখানা না হয়। এটা আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে। যাতে বাংলাদেশের প্রত্যেক বিনিয়োগকারী, তাদের সবার সুবিধা যাতে নিশ্চিত হয়। যাতে সংঘবদ্ধ চক্র শেয়ারবাজারকে ম্যানিউপুলেট না করতে পারে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে কী হয়েছে? ২০১০ সালে যে ভয়াবহ ডাকাতি হয়েছে শেয়ারবাজারে, কোনও ধরনের কোনও জবাবদিহি এসেছে এটার মধ্যে? কেউ কি এটার জন্য আইনের আওতায় এসেছেন? আসেন তো নাই। এই সময়ে যেটা হয়েছে, এক ডাকাত সরিয়ে আরেক ডাকাতকে আনা হয়েছে।

সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কথা হচ্ছে, এমন বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনতে হবে যে, যারা নির্মোহভাবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে একটি রিফর্মের জায়গায় নিতে পারবেন। যাতে সবাই বেনেফিটেড হয়। শেয়ারমার্কেটের ক্লিন আপ প্রসেসটা যদি ঠিকভাবে হয়, বিশ্বাস করেন এই শেয়ারমার্কেটটা উঠবে।

আমাদের সাংবাদিকদের ভয়াবহ রকমের ঠকানো হয়

সাংবাদিকদের ছুটিছাটা-সুবিধা বাড়ানো হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনাদের ইউনিয়নের এগুলোর ব্যাপারে বলা উচিত। সরকারই আপনাদের হয়ে সব করে দেবে, এটার চেয়েও আমার মনে হয় ইউনিয়নের এই আলাপটা তোলা উচিত। নেগোসিয়েশনটা হচ্ছে ইউনিয়নের সঙ্গে মালিকদের।

সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের ইউনিয়ন তো গত ১৫ বছর পূর্বাচলের প্লট নিয়ে ব্যস্ত ছিল, ডিজিএফআইয়ের দালালি নিয়ে ব্যস্ত ছিল। একটা ঠান্ডা মাথার খুনি মনিরুল, তার সঙ্গে সবাই ছবি দিচ্ছেন, মনিরুল ভাই আপনি না আসলে দেশ উদ্ধার হতো না, এই সব মেসেজ দিতেন। আমার মনে হয়, ইউনিয়নের এই আওয়াজগুলো তোলা উচিত। আমাদের সাংবাদিকদের ভয়াবহ রকমের ঠকানো হয়।

প্রেস সচিব বলেন, ৩০ হাজার টাকার নিচে কোনও সাংবাদিক বেতন পাবে না। আর যারা দিতে পারবে না, তারা আল্লাহ ওয়াস্তে বন্ধ করে দেন। আমাদের ডিএফপির যে সিস্টেম, সর্ষের ভেতরে ভূত। সে জায়গাটায় আওয়াজ তোলা উচিত। সাংবাদিক নেতারা পত্রিকার অনুমোদন নিয়ে ডিএফপির তালিকায় সবার ওপরে রেখে দেয়, অথচ একটা কপি চলে না। নিজে পড়েন, ওনার বউ পড়েন, আর কেউ পড়েন না। এই আওয়াজগুলো ইউনিয়নের তোলা উচিত।

ভারতের মিডিয়া নিয়ে অ্যাকশন নয়

গেলো কয়েকদিনে ভারতে বাংলাদেশের সাতটি চ্যানেলের ইউটিউবে সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু সাংবাদিকের ক্ষেত্রেও এ ঘটনা ঘটেছে। এ  প্রসঙ্গে শফিকুল বলেন, ইন্ডিয়ার এটা খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এটাতে বুঝা যায় ইন্ডিয়ার কর্তৃপক্ষ ‘ফ্রিডম অব স্পিচে’ কতটা বিশ্বাস করেন। আমরা এটা দেখছি, যাদেরকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তারা বাংলাদেশে খুবই রেসপেক্টেড নিউজপেপার বা ওয়েবসাইট বা টিভি স্টেশন। এটাতে বুঝা যায়— তারা (ইন্ডিয়া) সত্যকে নিতে পারছেন না, সত্য কথাকে নিতে পারছেন না।

প্রেস সচিব বলেন, অনেকে জিজ্ঞেস করেন যে, আমরা পাল্টা অ্যাকশনে যাবো কিনা। আমাদের কোনও ইচ্ছা নাই পাল্টা অ্যাকশনে যাওয়ার। তাতে হবে কী তাদের অ্যাকশনটাকে লেজিটিমাইজ করা হবে। তাদের অ্যাকশনটাকে বৈধতা দেওয়া হবে। আমাদের কোনও ইচ্ছা নাই। আমরা জানি, ইন্ডিয়ান মিডিয়া কী তামাশা করে। সত্যিকার অর্থে তারা তামাশা বিক্রি করে প্রতিদিন।

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে একটা এনাউন্সমেন্ট দেওয়া হয়েছে। ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে এটা হবে। আপনারা ততদিন একটু ধৈর্য ধরেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের চলে যাওয়ার প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, এটার জন্য একটা হাই পাওয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত ১৫ কর্মদিবসে তারা এটি ইনভেস্টিগেট করে দেখবেন কোথায় ল্যাপসটা হয়েছে। সেটা তারা আইডেন্টিটিফাই করবেন এবং কার কার ভূমিকা ছিল সেটা জানবেন।