শ্রম সংস্কারের অগ্রগতি সম্পর্কে কূটনীতিকদের অবহিত করলেন বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী

শ্রম সংস্কারের বিগত আট মাসের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং আগামীর রোডম্যাপ প্রণয়নে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএলওসহ পশ্চিমা দেশগুলোর শীর্ষ রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে সোমবার (১২ মে) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। তার সঙ্গে ছিলেন কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞরা।

লুৎফে সিদ্দিকী ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার প্রথম পূর্ণাঙ্গ সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, গত আট মাসে আমরা নাটকীয় অগ্রগতি অর্জন করেছি।

বিশেষ দূত বলেন, আইএলও’র রোডম্যাপ শুধু একটি নির্দেশনা নয়, এটি একটি অঙ্গীকার। প্রক্রিয়া এবং ফলাফল উভয় ক্ষেত্রেই এই অধিকার পেতে আমরা সময়, শক্তি এবং সদিচ্ছা বিনিয়োগ করছি। 

এসময় তিনি শ্রম উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেনের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা ও নৈতিক কর্তৃত্বের প্রশংসা করেন।

সভায় শ্রম সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, শ্রম আইন সংশোধনসহ অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জনে ২০২৫ সালের জুলাই মাসকে টার্গেট করছি আমরা। প্রক্রিয়াটি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এই প্রক্রিয়াটিকে ‘নজিরবিহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন আমরা লক্ষ্য করেছি যে, অনেক সামাজিক সংলাপ হয়েছে এবং আমরা এই কাজের দ্রুততার বোধকে উপলব্ধি করি। আমরা শিগগিরই খসড়া আইনটি দেখার এবং মাঠ পর্যায়ে বাস্তব উন্নতিগুলো ট্র্যাক করার প্রত্যাশায় রয়েছি। এর সমাধানের ফলে ইইউ বাজারে অব্যাহত প্রবেশাধিকারের প্রভাব রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের অধীনে এই গতিকে স্বাগত জানাই এবং অতীতের লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিও দেখতে চাই।

কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং বলেন, আমরা এখনও পর্যন্ত যে কাজ করেছি তার প্রশংসা করি এবং আইএলও রোডম্যাপকে সমর্থন করি। এলডিসি উত্তরণের প্রেক্ষাপটে এটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে অবশ্যই শক্তিশালী শ্রমমান থাকতে হবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে গুরুত্ব সহকারে এই বিষয়টিকে গ্রহণ করেছে, তার জন্য আমি সবার প্রশংসা করছি।

আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিয়াইনেন বলেন, আমরা বাংলাদেশ শ্রম আইন হালনাগাদ করার খুব কাছাকাছি রয়েছি। এখন যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো— এটি এমনভাবে করা যা সময় উপযোগী হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে শ্রমিকদের রক্ষা করে।

লেজিসলেটিভ সেক্রেটারি ড. হাফিজ আহমদ চৌধুরী বলেন, আমরা যথেষ্ট আইনি অগ্রগতি অর্জন করেছি এবং আমাদের টিম স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

লুৎফে সিদ্দিকী পূর্ববর্তী সরকারের রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত মামলাগুলো মোকাবিলা, আদালতে অচলাবস্থা এড়াতে আরও ভালো বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা এবং পরিদর্শকের ভূমিকায় অপর্যাপ্ত ক্ষমতার বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র, শ্রম ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পূর্ববর্তী আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের বিষয়েও কূটনীতিকদের অবহিত করেছিলেন।

লুতফে বলেন, এটা শুধু ঘরোয়া বিষয় নয়। শ্রম অধিকার এখন বাজারে প্রবেশাধিকার, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের শুল্ক এজেন্ডাসহ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য সিদ্ধান্তের সঙ্গে আবদ্ধ। সে অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে।

কূটনীতিকরা একমত হয়েছেন যে, শ্রম সংস্কার এবং জবাবদিহি অবশ্যই সব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অগ্রাধিকার থাকতে হবে। অনেকে বাংলাদেশের উত্তরণে তাদের দেশের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

সমাপনী বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ সরকারের জন্য সঠিক কাজ করার এক অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। আইএলও পরিচালনা পর্ষদে মামলাটি শেষ করার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সবার সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।